যৌন ক্ষমতা হ্রাস বৃদ্ধিতে করোনা ভ্যাকসিনের ভূমিকা নেই

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:৫৬

আমিনুল ইসলাম

কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার পর এর কার্যকারিতা শুরু হতে তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগে। এখন কেউ যদি ভ্যাকসিন নেয়ার এই তিন সপ্তাহের মধ্যে করোনা সংক্রমিত হন বা যদি ভ্যাকসিন নেয়ার আগেই করোনা দেহে প্রবেশ করে থাকে তাহলে তো ভ্যকসিন নেবার পর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোভিড হতেই পারে। ভ্যাক্সিন না নিলেও এটা হতো।

মিডিয়াতে ‘ভ্যাকসিন নেয়ার পর .... জনের করোনা সংক্রমণ’ এ ধরনের হেডলাইনগুলো বেহুদা ভুল তথ্য ছড়াতে পারে, ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে। কাটতি বাড়ানোর অসৎ উদ্দেশ্য না থাকলে এ ধরনের হেডলাইন করার আগে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের উচিত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কারো সাথে কথা বলে নেয়া।

কোভিড ভ্যাকসিন নিলে তার প্রতিক্রিয়ায় কোনোভাবেই করোনা সংক্রমিত হওয়ার চান্স নেই কারণ এতে কোনো লাইভ করোনা ভাইরাস ব্যবহার করা হয়নি।

কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার ফলে নারী বা পুরুষের সন্তান জন্মদান ক্ষমতা কমার দূরতম কোনো সম্ভাবনা নেই। যৌন ক্ষমতা হ্রাস বৃদ্ধি এ ভ্যাকসিনের কর্ম নয়। সুতরাং গুজবে কান দেয়া যাবে না।

নারীদের উপর এ ভ্যাকসিনের গবেষণা কম হয়েছে তাই এটি ব্যবহারে সরাসরি বলা না হলেও এতে কোনো ক্ষতি হবে কোনো প্রমাণ নেই। ফ্লু, রুবেলার মতো আরো কিছু ভ্যাকসিন প্রেগনেন্সিতে নিয়মিতই দেয়া হচ্ছে। আগের সব অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে কোনো কোনো উন্নত দেশের নীতিমালা পরিবর্তন করে বলা হয়েছে ফ্রন্টলাইনার (যেমন ডাক্তার) প্রেগনেন্ট নারীদেরও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেয়া উচিত। উল্লেখ্য প্রেগনেন্সিতে করোনা সংক্রমণের প্রভাব সন্তান নষ্ট হওয়াসহ অন্য অনেক দিক দিয়ে বেশ নেতিবাচক।

যারা সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করছেন তাদের কোভিড ভ্যাকসিনের টাইমিংয়ের এর সাথে তাল মিলিয়ে সর্তকতা হিসেবে কিছুটা হেরফের করা যেতে পারে। দ্বিতীয় ডোজ এর দেড় দুই মাস পরে কনসিভ করলে কোভিড থেকে ইমিউন অবস্থায়  প্রেগনেন্সি লাভের সুবিধাটুকু পাওয়া যেতে পারে।

যে সব মায়েরা সন্তানদের ব্রেস্ট ফিড করান তাদের বা তাদের বাচ্চাদের জন্য এই ভ্যাকসিন ক্ষতিকর হবার কোনো কারণ নেই। আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের রিকমন্ডেশন হলো করোনা সংক্রমণের অধিকতর ঝুঁকি আছে এমন lactating মায়েরা কোভিড ভ্যাকসিন নিবেন।

যাদের আগে করোনা সংক্রমণ হয়ে গেছে তাদেরও সুস্থ হবার পর কিছুটা বিরতি দিয়ে অন্য সবার মতোই ভ্যাকসিন নিতে হবে। কোভিড হয়ে গেলে ভ্যাকসিন লাগবে না বা কম লাগবে ব্যাপারটা সেরকম নয়।

বিভিন্ন ওষুধ ও বস্তুতে এলার্জি থাকলেও আপনি ভ্যাকসিন নিবেন এবং নিতে পারবেন। তেমন তীব্র এলার্জিক রিএকশন ১০ লাখে একজনেরও কম মানুষের হয়। জ্বর, শরীর ব্যথা অন্যসব ভ্যাকসিনের মতো এই ভ্যাকসিনেও হতে পারে এবং এ স্বাভাবিক ব্যাপারটা সংবাদ হবার মতো কোনো ঘটনাও নয়।

এ ভ্যাকসিন খুব দ্রুত আবিষ্কৃত হয়ে যাওয়ায় কাজ কম করবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কেননা সেফটি ট্রায়াল বলি বা efficacy trial বলি কোনো  কোনো phase ই এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথে বাদ দেয়া হয়নি।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও অবমুক্তির পথ রাষ্ট্র ও  কোম্পানিগুলোর নানাবিধ আমলাতান্ত্রিক নিয়ম কানুনের নিগড়মুক্ত ছিল যা ভ্যাকসিন দ্রুত লব্ধ হওয়ার পথে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।

আমাদের ডিএনএর  ধারে কাছেও এই ভ্যাকসিনের mRNA যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ডিএনএ থাকে নিউক্লিয়াসের ভিতরে আর ভ্যাকসিনের মেসেঞ্জার আরএনএ এর দৌড় সাইটোপ্লাজম পর্যন্ত। সুতরাং ভ্যাকসিন ডিএনএ বদলে দিবে এটা উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা।

এন্টারকোটিক হুজুরের মাইক্রোচিপস প্রসঙ্গ তুলে আর লোক হাসাতে চাই না। মাইক্রোচিপস কখনো তরল পদার্থের হতে পারে সেটা এই গুজব শুরু হওয়ার আগে মানুষ কল্পনাও করেনি।

যারা নানাবিধ immunosuppressant  যেমন ক্যান্সারের কেমোথেরাপি, আর্থ্রাইটিস এর জন্য মেথোট্রেক্সেট, অ্যাজমার জন্য মনোক্লোনাল এন্টিবডি (Omalizumab) ইত্যাদি নিচ্ছেন তারাও অন্য সবার মতোই ভ্যাকসিন নিবেন।

প্রেসার, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, এজমা, ব্রংকাইটিস, এলার্জি, লিভার ও কিডনির সমস্যা যাই থাকুক- অন্য সবার মতোই আপনি ভ্যাকসিন নিবেন, অন্যদের চেয়ে আপনার ভ্যাকসিনের প্রয়োজন বরং আরো বেশি। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে বেশিরভাগ উর্বর মস্তিষ্কজাত ও কিছুটা ভয়, অজ্ঞতা থেকে তৈরি হওয়া Vaccine myth গুলোকে 'না' বলুন।

লেখক: চিকিৎসক, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (চেস্ট ডিজিস), বিএসএমএমইউ

ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/এসকেএস