বৈচিত্র্যময় খাবারের সন্ধানে কালাই কুঠিরে একদিন

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৫৩

আনিকা সাবা

বন্ধের দিনের আগের রাত মানেই একটু বাড়তি স্বাধীনতা। অফিসের কাজ ছাড়া আরেকটা দিন ভাবতেই ভালো লাগে। নেই সকাল সকাল ওঠার নিয়মিত দুশ্চিন্তা। সন্ধ্যায় ইট পাথরের এই শহরে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে মন চেয়েছিল খোলা মাঠে গিয়ে দাঁড়াতে। নিয়মিত বেজে ওঠা মুঠোফোনে রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার নিমন্ত্রণ। 

খেলার প্রতি ঝোঁক না থাকলেও মাঠের লোভে তখন আমি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বঙ্গবন্ধু স্কুল মাঠে। শীতটা বেশ ছিল। ঘড়িতে ১০টা ছুঁই ছুঁই। এই শীতে হাঁসের মাংসে নৈশভোজন হলে মন্দ হতো না। কিন্তু কীভাবে কোথায় পাই? মাঠের পাশেই কালাই কুঠির। উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত কালাই রুটি এই রেস্তোঁরার প্রধান আকর্ষণ। 

প্রবেশেই উষ্ণ অভ্যর্থনা। কুড়কুড়ে মোড়ালি দিয়ে মিষ্টিমুখ। এলাকার বড়ভাইরা পরিচিত হওয়াতে কালাই কুঠিরের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হোসেন আসলেন আমাদের টেবিলে। গ্রামীণ পরিবেশকে ফুটিয়ে তুলতে দেয়ালে গ্রামের বধু আর পালকির ছবি আঁকা। মনে হবে সুন্দর বিকেলে এসেছেন কোন পরিচিত উঠানে। ছাদে ঝুলছে চারকোনা করে সাদা মোটা দড়ি। 

ভিন্নধর্মী এই ডিজাইনের নিয়ে নাজমুল বলেন, আমরা রেস্তোরাঁতে গ্রামীণ পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি। মানুষ যেন উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত কালাই রুটির স্বাদ এখানে বসেই পেতে পারে। আমাদের বসার স্থানগুলোও আমরা সাধারণ রেখেছি। খাবারের মানে আমরা কোন ধরনের ছাড় দেই না। আমাদের শেফরা পরিপূর্ণ দক্ষ এবং গ্রাহকদের চাহিদা বুঝতে সক্ষম। 

স্থানীয় মুখরোচক খাবারের প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে। হঠাৎ করেই এমন একটি রেস্তোরাঁ পেয়ে আমি অনেক খুশি হলেও তাদের খাবার না খাওয়া পর্যন্ত এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না যে তাদের খাবার নিয়ে আমি একটা রিভিউ লিখবো। 

এবার গুণবিচারী। খাবার পরিবেশন এতটাই চমৎকার ছিল যে দেখার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত আমরা সবাই খাবার খেতে হামলে পড়েছিলাম। খাবারের মশলার উপস্থিত পরিমান মত ছিল। স্বাদ ছিল অতুলনীয়। আমরা সবগুলো আইটেম অর্ডার করেছিলাম । প্রতিটার স্বাদই ছিল জিভে লেগে থাকার মতো। একটা থেকে আরেকটার স্বাদ পুরোপুরি ভিন্ন। প্রত্যেকের স্বাদের নিজস্ব স্বকীয়তা থাকে। সে হিসেবে আমার জিভ প্রতিটি খাবারকে মানের পরীক্ষায় বিবেচনা করে। সত্যি বলতে কি! খাবারের স্বাদে আমি গোল্ডেন প্লাস দিতেও দ্বিধা করিনি। এতে অবশ্য মোটামুটি প্লেট সাবার করেই আমরা আহারপর্ব শেষ করেছিলাম। 

এখন বলি কালাই রুটি নিয়ে। কালাই রুটি মূলত উত্তরবঙ্গের একটি বিখ্যাত খাবার। বিভিন্ন ঝাল ভর্তা ও মাংসের ঝোল দিয়ে কালাই রুটি খাওয়া হয়।
 
আমাদের অর্ডারকৃত খাবারগুলো ছিল – বেগুন ভর্তা , শুকনা মরিচ ও পেয়াজ ভর্তা , ধনেপাতা ভর্তা , গরুর স্পেশাল ভুড়ি ভাজা, শাহি খাসীর কোর্মা, গরুর স্পেশাল মেজবানি, কবুতর ও হাঁসের মাংস। প্রতিটা খাবারের অনুপাত দুইজনের সমানে ছিল এবং দাম ছিল সাধ্যের মধ্যে। ভর্তা আইটেমগুলোর দাম ছিল ১০-২০/-টাকা, গরুর রেজালা ১৪০/- টাকা , খাসীর কোর্মা ১৯০/-টাকা, কবুতরের মাংস ১৮০/-, হাঁসের মাংস ১৪০/- এবং প্রধান আকর্ষণ কালাই রুটি মাত্র ২৫/-টাকা। এখানে মাত্র ১০ টাকায় মিলবে চালের রুটি। যারা গরুর বট পছন্দ করেন, ১১০ টাকায় পেয়ে যাবেন পুরো এক প্লেট গরুর বট।

খাবারের পরে আমরা অনেকগুলো কেক খেয়েছিলাম সেগুলোও অনেক মজার ছিল। সল্টেড পিনাট, চিজ কেক, ব্ল্যাক ফরেস্ট, ভেনিলা কেক, চকোলেট ক্যারামেল, রেড ভেলভেট, চকোলেট, টিরামিসু, মল্টেড চো কেক এর ৫০০ গ্রাম বা হাফ কেজি মিলবে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকাতে। এছাড়াও রসকদম, পাতা সন্দেশ এবং আদি চমচম ২৫ টাকা প্রতি পিসে মিলবে।  

নাজমুল হাসান ভোজন রসিক এবং আন্তরিক মানুষ। রেস্তোরাঁর ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, রেস্তোঁরা খোলার সময় আমি প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম উত্তরবঙ্গের মুখোরোচক খাবার দিয়ে শুরু করতে আর সেক্ষেত্রে কলাই রুটি একমাত্র অপশন ছিল। আমার রেস্তোরার প্রতিটা খাবার অথেনটিক এবং মুখরোচক, আমাদের এখানে সব থেকে পপুলার আইটেমটি হচ্ছে শাহি খাসির কোর্মা।

সত্যি বলতে সেদিনের খাবার আর পরবর্তী আড্ডাটা এতটাই আমাদের মনে দাগ কেটেছে যে আমরা কালাই কুঠিরে বার বার খাবারের ইচ্ছে জাগবে। তবে রেস্তোরাঁ ছাড়াও অনলাইনে পাঠাও ফুড এবং ইফুডে পাওয়া যাবে কালাই কুঠিরের খাবার। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্টটি ভোজন রসিকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। ভবিষ্যতে ভুনা খিচুড়িও খাবারের মেনুতে যুক্ত হবে বলে জানান কালাই কুঠিরের স্বত্তাধিকারি নাজমুল হাসান। 

(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/এজেড)