‘এখনো সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক’

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ০১ মার্চ ২০২১, ১৬:৩৮ | প্রকাশিত : ০১ মার্চ ২০২১, ১৬:২৫

কাতারে আল নূর কালচারাল সেন্টারের ভার্চুয়ালি এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ‘বাংলা ভাষা ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষা রক্ষার্থে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে আমরা জানি না। বাংলার বীরদের প্রাণ উৎসর্গের কারণে আমরা বাংলাকে প্রথমে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে পেরেছি। পরবর্তী সময়ে প্রবাসীদের প্রচেষ্টায় জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। কিন্ত এখনো সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস উপলক্ষে 'বাংলা ভাষা সন্ধ্যা'র আয়োজন করে আল নূর কালচারাল সেন্টার। আল নূর মহাপরিচালক প্রকৌশলী শোয়েব কাসেমের তত্ত্বাবধানে ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী আবু রায়হানের সভাপতিত্বে এতে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন আলোচকরা।

ভাষার মাসের এই আয়োজনে বাংলা ভাষা বিষয়ক সংক্ষিপ্ত ক্লাস নেন আল নূর গবেষণা ও প্রকাশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনুল হক। এছাড়াও মনোমুগ্ধকর এই আয়োজনে সন্নিবেশিত ছিল ভাষাভিত্তিক দরসে কুরআন। এতে অংশ নেন মাওলানা জসিমউদ্দিন মাশরুফ, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নিয়াজ মুর্শেদ।

জাতীয় কবি অনূদিত আল কুরআনের আমপারা থেকে পাঠ করে শোনান রবিউল হক। রাসুলের প্রিয় কবিতার অনুবাদ উপস্থাপন করেন মতিউর রহমান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ কবিতাটি আবৃত্তি করেন বাংলাদেশ স্কুলের শিক্ষক তাফসিরুদ্দিন। নজরুল কাব্যের আরবি অনুবাদ উপস্থাপন করেন কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাওলানা নাইমুল হক।

ভাষা সন্ধ্যা অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন আল নূর সেন্টার কাতারের নির্বাহী পরিচালক মাওলানা ইউসুফ নূর। এসময় তিনি বলেন, ‘গত ৫০ বছরে দেড় হাজার বছরের সব ইসলামি জরুরি কিতাব বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এখন আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, কুরআন ও হাদিস বুঝতে আগের মতো উর্দু ভাষার দ্বারস্থ হতে হবে না। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের আলেম সমাজের একটি প্রশংসনীয় অবদান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাষ্ট্রীয়ভাবে এখন পর্যন্ত এই কাজের কৃতিত্ব এবং সম্মাননা আলেম সমাজকে দেয়া হয়নি।

আল নূর কালচারাল সেন্টার যুক্তরাষ্ট্র শাখার নির্বাহী পরিচালক মুফতি ইসমাইল বলেন, ‘রাসুল সা. কখনো নিজের মাতৃভাষা ছাড়া কথা বলতেন না। তিনি মাতৃভাষাকে ভালোবাসতেন। ১৯৫২ সালের ঘটনাকে অনেকে ধর্মের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। অথচ এর সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক ছিল না। সুতরাং এ নিয়ে অপব্যাখ্যা ও ষড়যন্ত্রের কোনো সুযোগ নেই।’

যুক্তরাষ্ট্র কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিজাম খাঁন বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি ভাষা নয়, বরং সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন জরুরি। ফ্রান্স ও জার্মানি এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পথ পরিক্রমায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাই বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা করলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই হুমকির সম্মুখীন হবে।’

কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসাইন বলেন, ‘হিন্দি ভাষার আগ্রাসনে নতুন প্রজন্ম মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে যা রীতিমত আশংকাজনক।’

বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক ও আল নূর শিক্ষা বিভাগের সহযোগী পরিচালক আবু শামা প্রবাসী সন্তানদের আল নূর বাংলা কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কমিউনিটি কাতারের সভাপতি প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ও আওয়ার ইসলামের বিশেষ প্রতিবেদক সুফিয়ান ফারাবী।

ভাষা শহীদদের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় বাংলা ভাষা সন্ধ্যা। মোনাজাত পরিচালনা করেন আল নূর সমাজকল্যাণ সহকারী মাওলানা গোলাম রব্বানী।

(ঢাকাটাইমস/০১মার্চ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :