বেরোবি ভিসিকে নিয়ে মন্তব্য: শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২১, ২০:২৯

বেরোবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসে আয়োজিত সরস্বতী পূজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর উপস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করায় মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। লিখিত অভিযোগে কোন অভিযুক্তের নাম উল্লেখ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট এতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে লিখিত অভিযোগ করায় প্রশাসন হীনমানসিকতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন মহল।

শনিবার রাতে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামাল। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পূজা উদযাপন কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ফেসবুকে মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত দেন। এরপরেই থানায় অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তারুজ্জামান প্রধান।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যথারীতি এবছরও (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সরস্বতী পূজা প্রাঙ্গণে উপস্থিত থেকে পূজার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পূজা প্রাঙ্গণে উপাচার্যের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নেতিবাচক বিবৃতি এবং মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়েছে। তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই দুইজন অন্যতম। বিভিন্নমহল থেকে বারবার তাদের হুমকি দেয়া হলেও তারা প্রতিবাদ করা বন্ধ করেনি। ভিসির অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সহায়তাকারী একটি চিহ্নিত মহলের প্ররোচণায় সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষার্থীদের পোস্ট সংযুক্ত করে থানায় অভিযোগ করেছে প্রশাসন। শুধু তাই নয়, পূজা উদযাপন কমিটি রেজিস্ট্রার বরবার যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সেটাও অযৌক্তিক। প্রশাসনের দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেও অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

অভিযোগের বিষয়ে বায়েজিদ নামে ওই শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যায় এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় কথা বলি। গত ১৬ তারিখে পূজা কমিটি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেই। সেখানে আমি অপবিত্র ব্যক্তি কাকে বলেছি সেটা উল্লেখ করিনি। অপবিত্র ব্যক্তি যে কেউ হতে পারে সেখানে। কিন্তু পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম, আমার দেয়া স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

আরেক শিক্ষার্থী তানভির বলেন, ভিসির বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে লিখিত অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নোংরামী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রমাণিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোসাল মিডিয়ায় নিন্দাসূচক বাক্য লিখেছি যার অধিকার রাষ্ট্রের সংবিধান আমাকে দিয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক অধিকার নিয়ে কাজ করি। আমার লক্ষ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। এতে আমি এতটুকু পিছপা হব না। আমি তাদের এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিব।

এ বিষয়ে পূজা উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রদীপ কুমার সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত পূজা অনুষ্ঠানে উপাচার্যের উপস্থিতি নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি বাজে মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়। এসব স্ট্যাটাস আমাদের পূজা উদযাপন কমিটির চোখে পড়লে আমরা মিটিং করে রেজিস্ট্রারকে লিখিত দেই।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামাল, প্রোভিসি সরিফা সালোয়া ডিনা, ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেনি।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে আসেন ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়ে সরস্বতী পূজার উদ্বোধন করেই তিনি আবার সাথেই ঢাকায় চলে যান। হঠাৎ ক্যাম্পাসে আসায় অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস এবং মন্তব্য করেন।

(ঢাকাটাইমস/১মার্চ/এলএ)