ন্যায্যমূল্য চান কক্সবাজারের লবণচাষিরা

সাইফুদ্দীন আল মোবারক, টেকনাফ (কক্সবাজার)
 | প্রকাশিত : ০২ মার্চ ২০২১, ১৪:০৯

কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, মহেষখালী ও কুতুবদিয়ার ৭০ থেকে ৮০% মানুষের আয়ের উৎস লবণ চাষ। এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল টেকনাফ, দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্ধ লাখ চাষীসহ পাঁচ লাখ মানুষ। তবে নানা প্রক্রিয়া আর ঘামঝড়ানো শ্রমে যে লবণ উৎপাদন হচ্ছে তার দাম নিয়ে এখন চরম হতাশ লবণচাষিরা।

তারা জানান, কতিপয় সিন্ডিকেটের কারণে লবণশিল্প ধ্বংসের পথে। টেকনাফসহ উপকূলীয় বিভিন্ন উপজেলার গোডাউনগুলোতে লবণ থাকার পরও বিদেশ থেকে লবণ আমদানি ও নানা সিন্ডিকেটের কারণে দিন দিন মূল্য কমে যাচ্ছে লবণের। এতে সংকটে পড়েছে গরিব লবণচাষিরা। তারা লবণের ন্যায্যমূল্যের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন।

চিঠিতে তারা লিখেছেন, `আমরা কক্সবাজারবাসী সমুদ্র উপকূলীয় জনগণ। আমরা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা তথা ভৌগোলিক নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দা। আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রবাহমান নদীর উচ্ছাস-গর্জনে প্রতিবছরের বর্ষা মৌসুমের ছয়টি মাস ভয়-ভীতিতে কাটাই। কখন ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের মতো মহা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আমাদের প্রাণ কেড়ে নিয়ে যায়! ভীত সন্ত্রস্ত হয়েও উপকূলীয় অঞ্চলের সৃষ্ট আদি পেশা লবণ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছি।‘

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুর্বিসহ জীবিকায়নে দুর্ভীক্ষের পূর্বাভাসের কথাগুলো যদি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রসারিত হয়, তাহলে প্রিয় বাংলাদেশের মান যতই উন্নয়ন হোক, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার স্থান হারাবে। কক্সবাজারের দুর্ভীক্ষের কথা বিশ্ব জেনে যাবে।

একজন লবণচাষি লবণ চাষের জন্য শ্রমিক প্রতি তিন কানি জমি বর্গা নিতে গিয়ে গৃহপালিত গরু ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাস-মুরগিসহ বিক্রি করে টাকার সংকূলান না হলে বিয়ের অলঙ্কার বন্ধক বা বিক্রি করে বেকারত্ব ঘুচিয়ে জীবিকার সন্ধানে রত। আমাদের বর্তমান অবস্থা অসহায়, নিঃস্ব এবং মানবেতর হয়ে হতদরিদ্রের চরম পর‌্যায়ে চলে যাওয়ার উপক্রম।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত ৩০ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভিডিও কনফারেন্সে আপনি নিজেই বলেছিলেন, `কক্সবাজারের নুন খাই,কক্সবাজারের গুণ গাই।‘

আপনার সেই বাণী অনুযায়ী আমরা জানাতে চাই, কক্সবাজারের সাত উপজেলার লবণচাষির পাশপাশি এ শিল্পের সঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ জড়িত। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস লবণ চাষ। তাই লবণচাষি ও মালিকদের ন্যায্যমূল্য প্রদানের মাধ্যমে তাদের বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত সময়ে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কক্সবাজার জেলাবাসী।‘

চাষিরা জানান, প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে তাদের খরচ হয় ৭-৮ টাকা। আর তা মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হয় চার টাকা কেজি করে। আবার একই লবণ সিন্ডিকেটের হাত বদলে, আয়োডিনযুক্ত প্যাকেটজাত হয়ে, ব্রান্ড লাগিয়ে বাজারে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি।

এ ক্ষতির জন্য চাষিরা অসাধু মিল মালিক সিন্ডিকেটদের দায়ী করে বলছেন, ‘এসব অসাধু সিন্ডিকেটগুলো দেশে চাহিদা পূর্ণ করার মতো লবণ মজুদ থাকার পরেও বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে ধ্বংস করে দিচ্ছে দেশের লবণশিল্প। এ অবস্থায় সীমান্ত এলাকার লবণচাষি ও মালিকদের দাবি, লবণের মূল্য আগের মতই রাখা হউক। যাতে করে লবণ শিল্প বেঁচে থাকে আর এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা কোনো রকম মুক্তি পায়।‘

কয়েকজন লবণচাষি বলেন, `আমরা ঋণ নিয়ে এ চাষ শুরু করছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঋণ শোধ করতে পারিনি। অসাধু মিল মালিকরা সিন্ডকেট করে লবণের দাম কমিয়ে ফেলেছে।‘

(ঢাকাটাইমস/২মার্চ/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :