কেন বড় সরকারি হাসপাতালের কাছে এত বেসরকারি হাসপাতাল?

মজিব রহমান
 | প্রকাশিত : ০২ মার্চ ২০২১, ১৪:১৭

বড় বড় সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি বেসরকারি হাসপাতাল থাকারই কথা নয়। কারণ বিনা পয়সায় ভালো চিকিৎসা রেখে কেন মানুষ কাছের অতিমূল্যের সেবা কিনতে বেসকারি হাসপাতালে যাবে। বরং কাছাকাছি সরকারি হাসপাতাল না থাকলেই মানুষ দ্রুত সেবার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে যাবে। কিন্তু উল্টো চিত্র কেন সর্বত্র? কেন বাংলাদেশে বড় বড় হাসপাতালের কাছেই এতো বেসরকারি হাসপাতাল?

একটু ভাবলেই কারণগুলো খুবই স্বাভাবিক মনে হবে।

১। ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে হাজিরা দিয়েই চলে যেতে পারেন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার জন্য। ওখানে দুই ঘণ্টা দেখে আবার আসলেন হাসপাতালে।

২। হাসপাতালে এসে যাদের দেখে বুঝলেন টাকা-পয়সা আছে তাদের বললেন, এখানে ভালমতো দেখা সম্ভব নয় পাশের হাসপাতালে যান আমি একঘণ্টা পরে গিয়ে ভালমতো দেখবো।

৩। যাদের পরীক্ষা করানো দরকার তাদের পাঠালেন ওই বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষার চার্জের ৪০-৫০ শতাংশ পান প্রেরণকারী ডাক্তার।

৪। হাসপাতালের কাজ কোনোরকম শেষ করেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবার ফিরে যেতে পারেন বেসরকারি হাসপাতালে। এবার রোগী দেখবেন দীর্ঘ সময় নিয়ে, ভালো ব্যবহার করে, অহেতুক অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়ে। হাসপাতালে ২০ জন রোগী দেখতে তার লাগে ৪০ মিনিট আর এখানে লাগে ৪ ঘণ্টা।

৫। একটা ইনজেকশন পুশ করতে সরকারি হাসপাতালে কোনো টাকা লাগে না। ভালোভাবে ইনজেকশন পুশ করতে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতে পারলেই হলো পুশের মূল্য ২ থেকে ১২ হাজার টাকা মাত্র। কাছাকাছি বেসরকারি হাসপাতাল না হলে সম্ভব নয়।

৬। আইসিইউ একটি মজার জায়গা। সরকারি হাসপাতালে গেলেই শুনবেন নাই, নষ্ট, সংকট। ডাক্তারতো পাঠিয়ে দিবে কাছের বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে আইসিইউ আছে। যিনি পাঠালেন তার কমিশন আছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই শুনি রোগী মারা গেছেন দুদিন আগে অথচ বিল করেছে আরো দুই দিনের। আবার ঐ ডাক্তারই কাছাকাছি হওয়ায় সরকারি হাসপাতালের কাজের ফাঁকে দেখে যেতে পারছেন রোগীকে।

৭।চশমার বা ওষুধের দোকানদারের সাথেও ডাক্তারের সম্পর্ক তৈরি হয়। আপনি যাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে কিন্তু ওরা শুনেই আপনাকে পাঠিয়ে দিবে বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে। দশ টাকার টিকিট কিনে আপনি হয়তো চোখের ইনজেকশনটা দিতেন। চশমার দোকানদার বলে দিল ভাইরে ওখানে ভালমতো দিতে পারবে না সর্বনাশ হতে পারে। আপনি ওই পাশের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েই দিন। দিয়েই দেখলেন বিল সাড়ে বারো হাজার টাকা মাত্র!

৮। সরকারি হাসপাতালের যেসকল ডাক্তার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎকের কাজ করেন তাদের টার্গেট থাকে। যেমন সেলসম্যানদের টার্গেট দেয়া হয় তাদেরও রোগী ভর্তির টার্গেট থাকে। কতটি পরীক্ষা করাতে হবে ও ওষুধ দিতে হবে তারও টার্গেট থাকে। এসব টার্গেট পূরণ করতে হয় পুরো বেতন পেতে। আবার যারা এই শর্তে থাকেন না তারা রোগী দেখার হিসেবে আনুপাতিক হারে টাকা পান। যাই হোক তাকে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠাতেই হয়। তাই কাছে থাকলেই সুবিধা।

৯। একটু দূরে হলেও কিন্তু আপনি সুবিধাগুলো পাবেন। যেমন বাংলাদেশে বসে যদি কোনো রোগীকে কলকাতায় পাঠান তবুও নাকি কমিশন পাওয়া যায়। এজন্যই কলকাতার প্রকৃত চিকিৎসার মান বাংলাদেশের চেয়ে ভালো না হওয়া সত্যেও একটা ভাবাদর্শ তৈরি হয়েছে যে ওখানে কম টাকায় ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায়।

১০। সরকারি হাসপাতালে একজন রোগীর চেয়ে একজন ওষুধ কোম্পানির এমআরের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ ওই এমআরের কাছ থেকে মিলে উপঢৌকন ও নগদ প্রণোদনা। ফলে তারা রোগীর চেয়ে তাদের সাথেই বেশি কথা বলেন। এমআরদের কাছাকাছি থাকার পরেও বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় করতে দেখা যায় না।

১১। আমাদের উপজেলার একজন এম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে পত্রিকায় অভিযোগ দেখেছিলাম। সুদীর্ঘকাল ধরে হাসপাতালের এম্বুলেন্সটি বন্ধই থাকে। বেতন নেন সরকারি আর তিনি চালান নিজের বেসরকারি এম্বুল্যান্স। আর সেটি দিয়ে রোগীকে বিভ্রান্ত করে ঢুকিয়ে দেন ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে।

আসলেই সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি বেসরকারি হাসপাতাল থাকা খুবই দরকার। আর এজন্যই গড়ে উঠেছে এতো হাসপাতাল। এতে কিছু উপকারিতাও আছে। বেসরকারি হাসপাতালে বিনিয়োগ বাড়ছে। একটা কর্পোরেট ধারণা তৈরি হয়েছে।

লেখক: সাবেক সভাপতি, বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ

ঢাকাটাইমস/২মার্চ/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :