যেখানে বাংলা মাধ্যম প্রাথমিকের বেহাল দশা সেখানে ইংরেজি মাধ্যম কেমন হবে!

মো. রশিদুর রহমান
 | প্রকাশিত : ০২ মার্চ ২০২১, ১৪:২৪

জাপানে আসার আগে ভেবেছিলাম যে সাথে করে এমন কি নিয়ে যাওয়া যায় যা আমার সত্ত্বাকে উপস্থাপন করবে। তাই সাথে করে একটা সাদামাটা ওয়ালমেট নিয়ে এসেছিলাম। যদিও সাদামাটা কিন্তু এর মধ্যে স্বর বর্ণমালা লেখা আছে যেটি আমি দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছি।

আমার কাছে এই স্বরবর্ণ অনেক মূল্যবান কারণ আমার অন্তর আত্না এই বাংলা বর্ণমালা ধারণ করে আছে। আমি পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেন বাংলা আমার মুখের ভাষা থেকেই যাবে। এটা আমার জন্য অনন্য বৈশিষ্ট্য যার মাধ্যমে আমি অন্যদের থেকে নিজেকে পৃথক করতে পারি। বাংলা ভাষার চর্চা নিয়ে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ আছে।

মাতৃভাষা বাদে অন্যান্য ভাষা শেখা দক্ষতার পরিচয় বহন করে কিন্তু দাম্ভিকতার পরিচায়ক হতে পারেনা। ঔপনিবেশিক শাসন চলে যাওয়ার পর আমাদের কেউ কেউ মগজ থেকে তার প্রেতাত্নাকে বিসর্জন দিতে পারে নাই। তাই শহুরে আধুনিকতার নামে বাংলার সাথে একটু ইংরেজি মিশিয়ে কথা না বললে কেমন জানি তারা জাতে উঠতে পারেনা।

কিছু ইংরেজি শব্দ আছে যেগুলো বাংলা করা যায় না। সেটুকু মেনে নেওয়া যায় কিন্তু কথার ফাঁকে ফাঁকে অর্ধেক ইংরেজি আবার অর্ধেক বাংলা কেমন যেন বেমানান লাগে। হয় তাকে সব বাক্য ইংরেজিতে বলতে হবে নাহয় যতটুকু না বললেই নয় ততটুকু বলা উচিত। বাংলিশও মাঝে মাঝে বড্ড ক্ষ্যাত লাগে!

ইদানিং খেয়াল করছি যে, কেউ কেউ আরবি থেকে বাংলায় ভাষান্তর লেখার সময় বাক্যকে ডানদিকে নিয়ে যায়। সারা পৃথিবীতে মাত্র কয়েকটি ভাষা যেমন আরবি, হিব্রু, ফারসি এবং উর্দু ডানদিক থেকে বামদিকে লেখা হয়। বাকী ভাষাগুলো সাধারণত বামদিক থেকে ডানদিকে লেখা হয়। ব্যতিক্রম যেমন জাপানিজ ভাষা উপর থেকে নিচের দিকেও লেখা হয়। এগুলো হচ্ছে বিভিন্ন ভাষার সৌন্দর্য্য। এখন যদি আপনি বাংলাকে বামদিক বাদ দিয়ে ডানদিকে নিয়ে যান তাহলে আপনি বাংলা লেখার নিয়ম ভঙ্গ করছেন বলা যেতে পারে।

এমনও দেখা যায় যে, দর্শকসারিতে সবাই বাংলা ভাষাভাষী এবং বক্তারাও বাংলা ভাষাভাষী কিন্তু ইংরেজিতে বক্তব্য উপস্থাপন করছেন। কেউ হয়ত ইংরেজিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারেন কিন্তু কার্যকরী যোগাযোগের জন্য দর্শকসারিতে যারা আছেন তাদের কথাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার যদি না সেই আয়োজন ইংরেজি শেখার আসর না হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা লেখা অনেকের কাছে ঝামেলা মনে হয় যদিও তারা ভালো বাংলা জানেন। শুধু আলসেমির কারণে অথবা বাংলা কি-বোর্ড ইনস্টল না করার কারণে অনেকেই বাংলা লেখে না। তারা বাংলিশের আশ্রয় নেয়। আমি এসব লেখা সবসময় এড়িয়ে চলি কারণ বাংলিশ পড়ার সময় মস্তিষ্কের উপড় অতিরিক্ত চাপ অনুভব করি। তাই আমিও পারতপক্ষে বাংলিশে কোনো উত্তর দেই না। হয় বাংলা নয় ইংরেজিতে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করি।

আমার কেন জানি মনে হয় বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অভাবে বাংলা ভাষাভাষীরা বিজ্ঞানের মৌলিক শাখা যেমন পদার্থ এবং রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পাচ্ছে না অথবা যুগান্তকারী কোনো আবিষ্কার করতে পারছে না। যেকোনো বিষয় হৃদয়ঙ্গম করতে হলে সে বিষয়ে পুরোপুরি স্পষ্ট ধারণা থাকতে হয়। ভাসাভাসা জ্ঞান নিয়ে অন্যকে অনুসরণ করা যায় কিন্তু খুব বেশিদূর আগানো যায় না। এশিয়ার মধ্যে চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া শুধুমাত্র নিজস্ব ভাষা চর্চার মাধ্যমে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা পেয়েছে কিন্তু আমরা কি সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন করতে পেরেছি। সম্প্রতি খেয়াল করলাম যে, ইংরেজি বিলবোর্ড সরানো হচ্ছে। এগুলো খুব ক্ষুদ্র প্রয়াস। তাও মন্দের ভালো যে কেউ এসব নিয়ে ভেবেছে। আবার এও দেখলাম যে, ইংরেজি মাধ্যম প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যেখানে বাংলা মাধ্যম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা সেখানে কেন ইংরেজি মাধ্যম প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হবে বুঝতে পারছি না!

লেখক: পিএইচডি গবেষক, জাপান

ঢাকাটাইমস/২মার্চ/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :