এনআইডি সার্ভারে ঢুকে ছবি বদলে ব্যাংক ঋণ নিত তারা

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২১, ১৪:৪৮ | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১, ১৫:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভারে ঢুকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির তথ্য ঠিক রেখে পাল্টে ফেলা হতো ছবি। সে অনুযায়ী প্রয়োজনে তৈরি করা হতো ভুয়া টিন সার্টিফিকেট ও ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স। এসব ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংক লোন তুলে পালিয়ে যেতেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা।

ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ফ্ল্যাট কিংবা জমি কেনার লোনের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি জানান, মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকা থেকে ডিবি মতিঝিল বিভাগের একটি টিম তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।

তারা হলেন- বিপ্লব, আল আমিন ওরফে জামিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম ওরফে বিদ্যুত, আব্দুল্লাহ আল শহীদ, রেজাউল ইসলাম ও শাহজাহান।

প্রতারণার কৌশল প্রসঙ্গে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রটি ফ্ল্যাট বা প্লট কেনা-বেচার কথা বলে মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। এদিকে একইসঙ্গে ব্যাংকে গিয়ে তারা ফ্ল্যাট কেনার জন্য লোন নেবে বলে জানায়। পরবর্তীতে প্রতারক দলটি ফ্ল্যাটের মালিকের কাছ থেকে এনআইডি এবং ফ্ল্যাটের কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে আসে।

তারপর এনআইডি সার্ভারে ঢুকে ফ্ল্যাট মালিকের সকল তথ্য হুবহু ঠিক রেখে ছবিটি পরিবর্তন করে দেয়। এর মাধ্যমে প্রতারকদের মধ্যেই কেউ ফ্ল্যাটের মালিক বনে যান। সার্ভারে পাল্টে দেয়ার ফলে ব্যাংকের লোকরা এনআইডির ওয়েবসাইটে চেক করে সবকিছু সঠিক দেখতে পান। ভুয়া ওই এনআইডি দিয়েই ভুয়া টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে লোনের আবেদন করতেন।

সে অনুযায়ী ব্যাংকের লোকজন প্রতারকদের অফিস পরিদর্শনে যান। এদিকে ১-২ মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে সাজানো অফিস বানাতেন। ওই অফিসে ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করা হতো। সবকিছু ঠিক থাকায় ব্যাংকও লোন দিতো। এরপর কিস্তি পরিশোধের সময় এলেই ওই অফিসে প্রতারকদের আর খুঁজে পাওয়া যেতো না।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা লোন নিয়ে এই চক্রটি আত্মসাৎ করেছে-এমন অভিযোগে পল্টন ও খিলগাঁও থানায় দুটি মামলা করা হয়। মামলার তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রথমে বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এনআইডি তৈরির সঙ্গে জড়িত নির্বাচন কমিশন অফিসের নিচের শ্রেণির কিছু অসাধু কর্মচারীদের সহায়তায় এ চক্রটি সার্ভার থেকে এনআইডি পাল্টে ফেলত। এমন অসাধু ৪৪ জনকে নির্বাচন কমিশন বরখাস্ত করেছে বলে ইতোমধ্যে আমাদেরকে জানিয়েছেন। আমরা তাদের বিষয়ে যাচাই করে দেখছি।

‘চক্রটির মূলহোতা আল আমিন ও খ ম হাসান। তারা তাদের অন্য সহযােগীদের প্রয়ােজন অনুয়ায়ী কখনও ক্রেতা আবার কখনও বিক্রেতা কখনও জমির মালিক কখনও ফ্ল্যাটের মালিক সাজাতেন। আব্দুল্লাহ আল শহীদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মিডেলম্যান হিসাবে কাজ করতেন। রেজাউল ইসলাম ও শাহজাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করেন।’

চক্রটি অন্তত ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোনের নামে অর্থ আত্মসাৎ করেছে জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আত্মসাতের খবর পেয়েছি। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া চক্রের সঙ্গে ব্যাংক কিংবা অন্যান্য কোন সেক্টরের কেউ জড়িত আছে কি না আমরা যাচাই করে দেখছি।

ঢাকাটাইমস/০৩ মার্চ/এআর/ ইএস