ফেনীর উপকূলে তরমুজ চাষ বেড়েছে তিন গুণ

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
 | প্রকাশিত : ০৩ মার্চ ২০২১, ১৯:৩০

কম সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় তরমুজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। ফেনীর সোনাগাজীর উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বেড়েছে তরমুজ চাষ। গত মৌসূমে সোনাগাজী উপজেলায় ১০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৭ হেক্টরে। এখন সোনাগাজী উপজেলার চরছান্দিয়া, চরদরবেশ ও আমিরাবাদ ইউনিয়নে ফসলের মাঠে সব দিগন্তেই নজর কাটছে তরমুজের ক্ষেত।

সমূদ্রের উপকূলে জেগে ওঠা সোনাগাজীর চরগুলো বছরের পর বছর অনাবাদী পড়ে থাকতো। বছরের কিছু সময় এসব অনাবাদী জমিকে মহিষের চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বেশিরভাগ সময়ই খালি থাকতো। এখন এসব অনাবাদি জমিতেই চলছে তরমুজ চাষ।

কৃষি বিভাগ জানায়, ফেনীর জমিতে পূর্বে কখনো তরমুজ চাষ না হলেও ২০১৭ সালে নোয়াখালী এলাকা থেকে আগত এক কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করেন। ওই বছরে তার লাভজনক সফলতা দেখে ২০১৯ সালে আট থেকে ১০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসূমে তরমুজ চাষ করে লাভবান হন। উৎপাদনে সম্ভাবনা ও ভালো দাম পেয়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকা থেকে কিছু কৃষক ২০২০ সালে সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় এসে ১০৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ শুরু করেন। কম সময়ে ভালো লাভ পাওয়ায় এবার উপজেলার চরছান্দিয়া, চরদরবেশ ও আমিরাবাদ ইউনিয়নে ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। চলতি মৌসূমে সোনাগাজীতে ১৬০ হেক্টর জমিতে ভিক্টর সুগার জাত, ১২২ হেক্টর জমিতে ওশেন সুগার ব্ল্যাক বেরী, ৩৫ হেক্টর জমিতে অন্যান্য জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, সোনাগাজীতে তরমুজ চাষীদের বেশিরভাগ কৃষক নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকা থেকে এসেছেন। স্বল্প সময়ের জন্য চরাঞ্চলে আসা এ কৃষকরা ক্ষেতেই তাবু লাগিয়ে অস্থায়ী বসতি তৈরি করেন। ক্ষেত থেকে তরমুজ তোলা শেষ হলে তারা পূণরায় নিজ এলাকায় ফিরে যান। ভালো লাভ দেখে স্থানীয় কৃষকরাও এবার নিজের জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেছেন।

সোনাগাজীর স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সবচেয়ে বেশি ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন জাফর উল্লাহ। তিনি জানান, তরমুজ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই। সময় কম লাগে। লাভও ভালো। তাই তিনি এবার তার সবগুলো জমিতেই তরমুজ চাষ করেছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সোনাগাজীতে তরমুজ চাষে বিপ্লব হতে পারে বলে মনে করেন এই কৃষক।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা মিয়াধন নামের এক তরমুজ চাষী জানান, তিনিসহ চার ভাই বিগত ১০ বছর যাবত সুবর্ণচরে অন্যের জমিতে তরমুজ চাষ করতেন। গত মৌসুমে তিনি সোনাগাজীর চরদরবেশ এলাকায় তরমুজ চাষ করে ভালো লাভ করেছেন। তাই এবার অন্য তিন ভাইকে নিয়ে সোনাগাজীতে তরমুজ চাষ করছেন। তিনি জানান, চাষাবাদ শুরু থেকে তরমুজ তোলা পর্যন্ত চার থেকে পাঁচ মাস সোনাগাজীতে থেকে পরে সবাই নিজ এলাকায় চলে যাবেন।

সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, সোনাগাজীতে প্রতি বিঘায় তরমুজ চাষে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তিন মাস পর প্রতি বিঘায় তরমুজ বিক্রি হয় অন্তত ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। তরমুজ চাষে কম সময়ে ভালো ফলন ও লাভবান হওয়া যায়। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে জমিতে প্রতি তিনফুট দূরত্বে তরমুজ চারা রোপণ করতে হয়। তরমুজ চাষে তেমন কোনো পরিশ্রম নেই। সামান্য পরিচর্যায় তিন মাসের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে।

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, সোনাগাজীতে তরমুজ চাষে খুব সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এ উপজেলায় বিগত বছরের তুলনায় এবার প্রায় তিন গুণ তরমুজ চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাষীদেরকে তরমুজ চাষে উদ্ধুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

(ঢাকাটাইমস/৩মার্চ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :