ছদ্মবেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু রেখেছে: ফখরুল

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২১, ২০:৩৪ | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১, ২০:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

‘স্বাধীনতার ইশতেহারের’ কোনো অঙ্গীকারই আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই পূরণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই স্বাধীনতা সংগ্রাম যেটা হয়েছিল, স্বাধীনতার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা, স্বাধীনতার যে কমিটমেন্ট ছিল, যে ইশতেহার ছিল তার একটাও আওয়ামী লীগ সরকার কোনোদিনই পূরণ করেনি। তারা বাকশাল গঠন করেছিল, পত্রিকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল, অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছিল, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল এই আওয়ামী লীগ। আজকে একটা ভিন্ন মোড়কে ছদ্মবেশে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু রেখেছে।’

বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার ইতেশহার’ দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। এর আগের দিন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

বিএনপি এই দুটি দিবসই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কর্মসূচির অংশ হিসেবে পালন করছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত শাহজাহান সিরাজের স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ টাঙ্গাইলে আরেকটি কর্মসূচিতে থাকায় অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি।

বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনে করণীয় তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সভার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাতে চাই যে, আসুন ১৯৭১ সালে আমরা যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা, আমাদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আরেকবার লড়াই করি, আরেকবার যুদ্ধ করি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করছি- শাহজাহান সিরাজের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যারা স্বাধিকার আন্দোলনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে, অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলে তাদেরকে এখন আওয়ামী লীগ স্মরণ করে না। স্মরণ করে না আ স ম আবদুর রবকে, স্মরণ করে না শাহজাহান সিরাজকে। আমরা সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে তাদেরকে সামনে নিয়ে এসেছি। আমরা ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না। আমরা ইতিহাসে যার যার অবস্থান সেটা দিতে চাই।’

বাক স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘লেখক মুশতাক আহমেদ তাকে শুধু সমালোচনামূলক একটা লেখার জন্যে এবং সেটা নিজে না, কার্টুনিস্ট কিশোরের একটা লেখা শেয়ার দেয়ায় তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ছয় মাস তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিল। এই মুশতাক আহমেদ একা নন। এই ধরনের ৭০০ মানুষকে তারা শুধু সমালোচনা করার জন্য তাদেরকে তুলে নিয়ে আটক করে রেখেছে। আমাদের ছাত্রদলের নেতারা এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আপনারা দেখেছেন- কী নির্মমভাবে নিষ্ঠুরভাবে তাদের এখানে নির্যাতন করা হয়েছে, পুলিশ তাদেরকে পিটিয়েছে।’

নির্বাচন কমিশনও বিএনপির প্রতিপক্ষ উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে দেখেন। প্রকাশ্যে প্রেসের সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরেকজন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ভীষণ তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। আরে ভাই, সারা বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তাদের মধ্যে দুই-একটা বাদে ৮০% তারা নিয়েছে। আমার নিজের পৌরসভাতে সাত দিন আগে থেকে তাদের পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা সমস্ত নেমে পড়ে বিএনপির যতজন নেতা-কর্মী সবাইকে এরেস্ট করেছে। সব জায়গায় নাই। তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের কী প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন নেই।’

জিয়াউর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। এই ৩ মার্চে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরবর্তীকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজ এই পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। গতকাল পালন করেছি পতাকা উত্তোলন দিবস। সেই সময়ে ডাকসুর ভিপি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।’

জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি নেতাদের মধ্যে সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হেলেন জেরিন খান প্রমূখ বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/০৩মার্চ/বিইউ/জেবি)