রণাঙ্গণের সম্মুখযোদ্ধা রতন পেলেন নতুন ঠিকানা

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২১, ১৮:৫১

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গণের সম্মুখযোদ্ধা রতন কুমার বিশ্বাসের (৮০) নতুন ঠিকানার ব্যবস্থা করলেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের রণভূমি গ্রামের আশ্রয় প্রকল্পে সরকারি খাস জমিতে দুই শতক জমির উপর নির্মাণ করা পাকাঘরে রতন বিশ্বাস ও তার স্ত্রী মনিরা বেগমকে তুলে দেয় উপজেলা প্রশাসন।

এসময়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোছাব্বেরুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের একান্ত সচিব এইচএম শাহিন, ষাটগম্বুজ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আকতারুজ্জামান বাচ্চু ও বাগেরহাট পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারুক তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

গত দশ বছর ধরে রণাঙ্গণের সম্মুখযোদ্ধা রতন বিশ্বাস বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি এলাকার রাধুর গ্যারেজের পাশে কাজিরবাড়ির জমিতে টিনশেড দিয়ে ঘর বেঁধে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের নজরে এলে তার নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন গৃহহীন দম্পতি রতন ও মনিরার খোঁজ-খবর নিয়ে এই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।

রতন বিশ্বাস ১৯৩৮ সালে বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের কালদিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি তরুণ। তরুণরা যখন যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে তখন তিনিও প্রশিক্ষণ নিয়ে বাগেরহাট সদরের মুক্ষাইট ও গোটাপাড়া গ্রামকে রাজাকারমুক্ত রাখতে তৎকালীন কমান্ডার রফিকুল ইসলামের অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন বলে দাবি করেন রতন কুমার বিশ্বাস।

মুক্তিযুদ্ধের ‘ওসমানী সনদ’ ছিল তার। কিন্তু সেই সনদ হারিয়ে ফেলেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম উঠানোর চেষ্টা করেননি কখনও, সহযোদ্ধাদের অধিকাংশই মারা গেছেন। এখন আর কেউ তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মানতে চান না বলেও দাবি এই সম্মুখযোদ্ধার।

আমি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে হৃদয়ে লালন করে মনিরা নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করি। আমাদের কোনো সন্তান নেই। কালদিয়া গ্রামে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল। এলাকার প্রভাবশালীরা তা সব দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রতনের। এরপর থেকে আমি ২০ বছরের অধিক সময় ধরে পরের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছি। আমি রঙ-তুলির কাজ জানতাম। সাইনবোর্ড ব্যানার লিখে যা আয় করতাম তা দিয়ে কোন রকমে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারি না। গত দশটি বছর আমরা দুজন দুর্বিসহ জীবনযাপন করছি। প্রশাসন আমারে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় গৃহহীন রতন বিশ্বাসের সন্ধান পেয়ে উপজেলা প্রশাসনকে তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে আমরা তার খোঁজ-খবর নিতে শুরু করি। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সহযোগিতা করা হয়। সরকারি খাসজমিতে রতন বিশ্বাসকে পাকাঘর করে দেয়া হয়েছে। মুজিববর্ষে কোন মানুষ ভূমি ও গৃহহীন থাকবে না। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বৃহস্পতিবার রতন কুমার বিশ্বাসকে ঘর উপহার দিয়েছি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরজমিনে গিয়ে দেখি- রতন বিশ্বাস রাস্তার পাশে একটি টিনের খুপরি ঘরে বসবাস করছেন। তাকে পুনর্বাসন করতে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের রণভূমি গ্রামের আশ্রয় প্রকল্পে সরকারি খাস জমিতে দুই শতক জমির উপর নির্মাণ করা পাকাঘরে রতন বিশ্বাস ও তার স্ত্রী মনিরা বেগমকে তুলে দেয়া হয়েছে। একটি পরিবারে ঘর সাজাতে যেসব সরঞ্জামাদি প্রয়োজন, তা আমরা কিনে দিয়েছি। তাকে সুপেয় পানির জন্য টিউবয়েল ও বিদ্যুতেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করার বিষয়টি নিয়ে আমরা স্থানীয় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলেছি। ইতোমধ্যেই আমরা রতন বিশ্বাসকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাচাই-বাছাই করে তার একটি প্রতিবেদন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আর তার পৈত্রিক সম্পত্তি বেদখলের যে অভিযোগ তিনি করেছেন, সেটিও গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমরা যেটা জানতে পেরেছি, তার পৈত্রিক অনেক সম্পত্তি বিভিন্ন জন দলিল করে নিয়েছেন এবং সর্বশেষ রেকর্ডে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে তা রেকর্ড হয়ে গেছে। সম্পত্তির বিষয়টিতে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/৪মার্চ/এলএ)