গ্রন্থ সমালোচনার সাথে প্রচ্ছদ নিয়েও মন্তব্য করতে হবে

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২১, ১৯:৫২

ড. সৌমিত্র শেখর

আমি তখন স্নাতক (স.) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। একটি কোর্সে আমাদের ‘গ্রন্থ-সমালোচনা’ লিখতে হতো। সাধারণত ছাত্রছাত্রীরা যেসব বইয়ের সমালোচনা পাওয়া যায় সেগুলোই নির্বাচন করে। এতে সুবিধেও মেলে। আমি তা করিনি। জুলফিকার মতিনের (তখনও জানতাম না, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) ‘শাদা কুয়াশার পাখি’ উপন্যাসের সমালোচনা লিখেছিলাম। সবে বইটি বেরিয়েছে। তখন স্টেডিয়াম মার্কেটে ‘ম্যারিয়েটা’ বলে বইয়ের দোকান ছিল। কিনেছিলাম সেখান থেকে। এখন স্টেডিয়াম থেকে বইপত্তরের দোকানপাট উঠে সাফ!

‘বই সমালোচনা’ লেখার পর কোর্সশিক্ষক প্রফেসর আবুল কাশেম চৌধুরী একদিন আমাকে ডাকলেন। সামাজিক নকশার উপর তাঁর একটি চমৎকার বই আছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছিলেন। সেবিষয়ের বই। স্যার আমাকে ঝাঁকুনি-জিজ্ঞাসায় বললেন, বইটি সত্যিই পড়েছি কিনা।

বুঝলাম, স্যারের কাছে বইটির খবর নতুন। আমি প্রত্যয়ের সঙ্গে বললাম, হ্যাঁ। এরপর তিনি আমার খুব প্রশংসা করলেন এবং বললেন, আমি বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে যে মন্তব্য করেছি, তাতে তিনি আরও মুগ্ধ হয়েছেন। ব্যাপারটি আর কিছু নয়।

জুলফিকার মতিনের ‘শাদা কুয়াশার পাখি’ হলো ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক একটি উপন্যাস। এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন বিশিষ্ট শিল্পী রফিকুন্নবী। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এই শিল্পীর নাম তখন ‘দৈনিক বাংলা’ আর ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় ‘রনবী’ নামে কার্টুনের সুবাদে সবার মুখে মুখে। আমি তাঁর আঁকা প্রচ্ছদের সমালোচনা করে লিখেছিলাম: প্রচ্ছদটি বইয়ের কাহিনির জন্য সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি।

শিল্পী গ্রন্থের কাহিনি সম্পর্কে কোনো রকমের ধারণা না-নিয়েই যে প্রচ্ছদটি এঁকেছেন, এটা নিশ্চিত। তা-না হলে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে সংগ্রামনির্ভর কাহিনিকেন্দ্রিক বইয়ে প্রেমের যুগলপাখি আসবে কেন?

শিল্পী শাদা কুয়াশা এঁকে দুটি কপোত উড়ে যাওয়ার যে দৃশ্য দিয়ে প্রচ্ছদ করেছেন, তা গ্রন্থের কাহিনির সঙ্গে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না ইত্যাদি। ‘শাদা কুয়াশার পাখি’ নামটিতে হয়তো রনবী বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু প্রচ্ছদশিল্পীরা কেন এমন বিভ্রান্ত হন?

শেষকথা: যাঁরা গ্রন্থ-সমালোচনা লেখেন তাঁদের কাছে অনুরোধ, আপনারা বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়েও মন্তব্য করুন। বই সম্পর্কে কোনো ধারণা না নিয়ে প্রচ্ছদ তৈরির (এখন আর ‘আঁকার’ লিখতে পারলাম না) শিল্পী এখন অনেক। নামিদামি শিল্পীদের সম্পর্কেও এই কথা শোনা যায়।

লেখক: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকাটাইমস/২মার্চ/এসকেএস