দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় চার ফেরি বিকল, তীব্র যানজট

রাজবাড়ী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২১, ২১:১২ | প্রকাশিত : ০৪ মার্চ ২০২১, ২০:৪৩

ফেরি স্বল্পতার কারণে দৌলতদিয়ায় ও পাটুরিয়া ঘাটে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে গত তিন-চার দিন ধরে দৌলতদিয়ায় ঢাকামুখী যানবাহনের লম্বা লাইন পরেছে।

যাত্রীবাহী ও ছোট গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হলেও পণ্যবাহী পরিবহনকে নদী পাড়ি দিতে দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকালে দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায় এই চিত্র দেখা যায়।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরির তীব্র সংকট। ফেরির যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নান জটিলতায় উভয় ঘাটে যানজট কাটছে না। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো অগ্রাধিকারভাবে পরাপার করায় পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো ঘাটে আটকা পড়ে আছে।

বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরিপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে ঢাকামুখী বিভিন্ন পণ্যবোঝাই শতশত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। আর যানজট কমাতে রাজবাড়ীর পুলিশ প্রশাসন ঘাট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়-কুষ্টিয়া রোডে আরো প্রায় ২০০ পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছে।

বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ছয় হাজারের বেশি গাড়ি ফেরি পারাপার হয়। কিন্তু এই রুটে নৌপথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রো রো (বড়) ফেরি নেই। চলাচলকারি ফেরিগুলো অনেক পুরনো। সার্বক্ষণিক সচল রাখতে গিয়ে অনেক ফেরি ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়ছে। বর্তমান বহরে থাকা ১০টি রো রো (বড়) ফেরির মধ্যে ভাষা শহীদ বরকত ও কেরামত আলী নামে দুটি ফেরি বিকল হয়ে আছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে ১০টি রো রো (বড়), সাতটি ইউটিলিটি (ছোট), একটি মাঝারিসহ ১৮টি ফেরি চালু রাখা হয়। অনেক দিনের পুরোনো ফেরি হওয়ায় অধিকাংশ ফেরির যন্ত্রাংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ছে ফেরি। এতে ফেরির সংখ্যা কমে গিয়ে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।

এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে ‘কেরামত আলী’ ও ‘ভাষাশহীদ বরকত’ নামে দুটি রো রো ফেরি বিকল হয়ে পড়ে। ‘কেরামত আলী’ ফেরিকে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতীতে রেখে মেরামতের কাজ চলছে। ‘ভাষাশহীদ বরকত’ ফেরিকে মেরামতের জন্য নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। প্রপেলশানের পাখা ভেঙে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার সকালে রো রো ফেরি ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান’কে মধুমতী কারখানায় রাখা হয়েছে।

পরদিন বুধবার সকাল থেকে মাঝারি ফেরি ‘ঢাকা’ যান্ত্রিক ত্রুটিতে বসে আছে। চারটি ফেরি বিকল থাকায় এই নৌপথে ফেরিসংকট বেড়ে যায়। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চালু করায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এই রুট থেকে ‘কপোতী’ ও ‘কেতকী’ নামের দুটি ইউটিলিটি ফেরি সরিয়ে নেয়া হয়। এ কারণে ফেরিসংকট আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে সাতটি বড় ও পাঁচটি ছোট ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

ফেরি সংকটের কারণে স্বাভাবিক পারাপার ব্যাহত হওয়ায় উভয় ঘাটে যানজট লেগেই থাকছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো অগ্রাধিকারভাবে পরাপার করায় পণ্যবাহী গাড়িগুলো ফেরি পারের অপেক্ষায় দিনের পর দিন ঘাটে আটকা পড়ে থাকছে।

বৃহস্পতিবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঢাকাগামী তিন কিলোমিটার লম্বা যানবাহনের লাইন। এর মধ্যে বেশির ভাগ পণ্যবাহী গাড়ি। অনেক গাড়ির চালক ও সহকারী গাড়ির ভেতর বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। খুলনার সরকারি পণ্যবাহী একটি ট্রাক গত সোমবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন চালক মোতালেব হোসেন।

তিনি বলেন, মোট তিনটি গাড়ি নিয়ে তারা রওয়ানা করেন। সোমবার রাতে ঘাট থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ আটকে দেয়। দুদিন থাকার পর বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঘাটের কাছে এসেও আরেকবার লম্বা লাইনে আটকা পড়েন। প্রায় তিন দিন মহাসড়কে অপেক্ষা করতে করতে তার কাছে থাকা টাকাপয়সা প্রায় শেষ।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিস্বল্পতার কারণে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহীসহ বিভিন্ন গাড়ি আটকা পড়ছে। বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়া প্রান্তে তিন কিলোমিটার লম্বা লাইনে গাড়ি আটকে আছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চালক ও যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার বলেন, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে কেরামত আলী, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও ভাষাশহীদ বরকত ঠিক হয়ে নৌপথে যুক্ত হবে। ফেরিস্বল্পতা কেটে গেলে যানবাহন পারাপার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

(ঢাকাটাইমস/৪মার্চ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :