গাজীপুরে মশার ‘রাজত্বে’ মানুষের অসহায় বসবাস

ইফতেখার রায়হান, গাজীপুর
 | প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০২১, ১৮:০৯

মশার উপদ্রবে অতিষ্ট গাজীপুরবাসী। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয় সর্বত্রই অসহনীয় মশার উপদ্রব। এ যেন মশার রাজত্বে মানুষের অসহায় বসবাস! বর্তমানে মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। এদিকে মশার উপদ্রব দিন দিন বাড়লেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর কোথাও মশার ওষুধ দেয়া হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।

শিল্পনগরী গাজীপুর কর্মব্যস্ত এক শহরের নাম। দিনে কর্মব্যস্ত মানুষের আনাগোনা আর সন্ধ্যায় দেখা মিলে মশার রাজত্ব। শ্রমিক অধ্যুষিত এই নগরীতে দিন দিন মশার যন্ত্রণা যেন বেড়েই চলছে। গাজীপুরের বাসিন্দারা যেন মশার কাছে অসহায়, জিম্মি। রাতে তো বটেই দিনের বেলায়ও চলছে মশার অত্যাচার। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেক্ট্রিক ব্যাট কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও সুফল মিলছে না। বিকাল থেকে শুরু হয়, সন্ধ্যার আজান পরলেই মশার উৎপাত তীব্র আকার ধারণ করে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির শতাধিক ফগার মেশিন কেনা হয়েছে। এছাড়াও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ভেহিকেল মাউন্টেইন’ ফগার মেশিন রয়েছে। এ বছর আরও কিছু ফগার মেশিন কেনার কথা ভাবছে নগর কর্তৃপক্ষ। সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয়েছে পোল্যান্ডের তৈরি ‘ডেন্টাসাইড ২৫০’ নামক মশার ওষুধ।

জানা গেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেন, পুকুর, ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিস্কার না করায় সেগুলো এখন মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নগরীতে মশার উপদ্রব তাই বেশি। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ট নগরবাসী। ঘরে বাইরে বাসা কিংবা অফিস সব জায়গায় মশা। কিন্তু মশক নিধন কর্মীদের মাঠে তেমন দেখা যায় না।

এদিকে নগরীর টঙ্গী, গাজীপুরা, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর, কোনাবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব বেড়েছে। অনেকেই ফ্ল্যাটের জানালায় নেট ব্যবহার করা সত্ত্বেও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নিচতলা থেকে শুরু করে ১০তলা পর্যন্ত সবখানেই মশার সমান উপদ্রব। তবে নিম্ন শ্রেণির মানুষদের ভোগান্তি আরও বেশি। সন্ধ্যার পর মশার কামড়ে শিশুরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। রাতে ঠিকমতো ঘুমানো যায় না মশার উপদ্রবের কারণে।

নগরীর মিলগেইট এলাকার ব্যবসায়ী মো. সবুজ অভিযোগ করে বলেন, মশার যন্ত্রণায় দিন-রাত অসহনীয় যন্ত্রণায় রয়েছি। দিনের বেলাও মশার উপদ্রব থাকে, বিকালে তা বেড়ে যায় বহুগুণ। মনে হচ্ছে আমরা কোনো মশার শহরে বসবাস করছি। অথচ এমন পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একবারও মশার ওষুধ প্রয়োগ করতে দেখছি না।

টঙ্গী পূর্ব থানা মসজিদের পেশ ইমাম জানান, মশার যন্ত্রণায় মসজিদে নামাজ পড়তে মুসল্লিদের ভীষণ কষ্ট হয়। কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা মশা নাশক স্প্রে করেও এ যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছি না।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এখন মূলত কিউলেক্স মশার উপদ্রব চলছে। স্ত্রী কিউলেক্স মশার মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ফাইলেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। ‘গাদ’ নামে পরিচিত এই রোগের কারণে হাত-পা ফুলে যায়, বারবার জ্বর হয়। এছাড়াও ম্যালেরিয়া ও চিকনগুনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তবে বর্ষা মৌসুমে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে এডিস মশার উপদ্রব। প্রতি বছর এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাই বর্ষা মৌসুমের আগেই মশক নিধনে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। এছাড়া মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের আঙিনা ও ভেতরে মশা ভনভন করছে। কয়েলের ধোঁয়ায় রোগীদের কষ্ট হওয়ায় কয়েলও জ্বালানো যাচ্ছে না। ফলে অসুস্থ রোগী ও তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনরাও মশার যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পারভেজ হোসেন বলেন, আমরা নিয়মিত হাসপাতাল ও আশপাশের আঙিনা পরিষ্কার করে থাকি। তবুও মশার উপদ্রব কমছে না। হাসপাতালের রোগীদের জন্য রাতে মশারি দেয়া হয়। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনকে মশক নিধনের ওষুধ ও ফগার মেশিনের জন্য জানিয়েছি। তারা অতি শিগগির হাসপাতালে প্রতিদিন বিকালে মশার ওষুধ স্প্রে করবেন বলে জানিয়েছেন।

আরএমও বলেন, শীতের শেষে আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করেছে। এ সময় মশা বংশবিস্তার ঘটায়। ফলে মশার উপদ্রব আনেক বেশি এখন। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়া, গাদসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। সামনে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই মশা নিধনের জন্য সিটি করপোরেশনকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে বড় ধরনের কোনো সংকট তৈরি না হয়।

এদিকে মশা নিধনে সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। ২০১৯ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যখন ডেঙ্গু মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখনই নিজ উদ্যোগে সিঙ্গাপুর থেকে পোল্যান্ডের তৈরি ২০০ টন মশার ওষুধ এনে সুনাম কুড়িয়েছিলেন গাজীপুর সিটির মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ওই সময় ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন পৌরসভায় বিনামূল্যে সেসব ওষুধ সরবরাহ করেন মেয়র জাহাঙ্গীর। কিন্তু গত বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে মশক নিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, সর্বশেষ ভার্চুয়াল মিটিংয়ে কাউন্সিলররা মেয়র মহোদয়কে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করার জন্য জানান। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখনও মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হয়নি। তাই আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজস্ব ফগার মেশিনের মাধ্যমে গত তিনদিন যাবত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আশা করছি খুব শিগগির সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হলে মশার উপদ্রব কিছুটা কমবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে গত বুধবার সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের তত্ত্বাবধানে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে আমরা প্রত্যেক ওয়ার্ডে ফগার মেশিন ও সিঙ্গাপুর থেকে আনা মশক নিধনের ওষুধ সরবরাহ শুরু করেছি। এছাড়াও ‘ভেহিকেল মাউন্টেইন’ নামে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ফগার মেশিন রয়েছে, যা দিয়ে গাড়িতে করে মশার ওষুধ স্প্রে করা যাবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৫মার্চ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :