টার্গেট করে বাসায় ডাকাতি, দলনেতার ‘জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা’

প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২১, ২২:৫৩ | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২১, ১০:২৫

আল-আমিন রাজু, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অভিনব কায়দায় ডাকাতি করছে একটি চক্র। মধ্যরাতে বাসার ভেতরে প্রবেশের পর পরিবারের একজন সদস্যকে জিম্মি করে, হাত-পা বাঁধেন তারা। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অল্প সময়ের মধ্যে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকাপয়সা লুটে নিচ্ছে। এই ডাকাত দলটির মাস্টারমাইন্ড ও দলনেতাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে বলেও পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, ইতিমধ্যে পুলিশের তেজগাঁও জোনের কয়েকটি এলাকায় ছয়টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছেন এই দলের সদস্যরা। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দুই মামলায় এই দলের সাতজন সদস্য কারাগারে আছেন। তাদের মধ্যে বিল্লাল নামের একজন ডাকাতি করে আনা স্বর্ণালঙ্কার বেচার কাজ করত।

জানা গেছে, রাজধানীর বুকে আতঙ্ক ছড়ানো এই দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড হলেন হৃদয় নামের একজন। তাকে খুঁজছে গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, হৃদয়ের জঙ্গি তৎপরতার প্রমাণ মিলেছে। এরইমধ্যে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ হাতে পেয়েছেন তারা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, হৃদয়ের জঙ্গি তৎপরতার বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। রাজধানীর পান্থপথের একটি বাসায় ডাকাতির সময়ে  জিম্মি একজনের গোপন অঙ্গে হাত দিয়ে মুসলিম নাকি হিন্দু সেটি পরীক্ষা করে দেখেছেন হৃদয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এডিসি) সাহাদৎ হোসাইন সোমা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা একটি ডাকাত দলের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। এই দলের সদস্যরা মূলত বিভিন্ন এলাকার ভবনের দ্বিতীয় তলাকে টার্গেট করে ডাকাতি করে আসছিলো।’

বাড়ির দোতলাকে টার্গেট করার পেছনে কারণ হিসেবে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্যদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু কারণ পেয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গা দিয়ে দ্রুত ওঠা যায়। যে কোনো ভবনের দোতলায় পৌঁছানো সহজ। দোতলায় দ্রুত ওঠা নামার কারণেই তারা এভাবে টার্গেট করে ডাকাতি করে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ডাকাত দলের সদস্যরা মূলত বাসায় প্রবেশ করে কোনো ধরনের হামলা করে না। পরিবারের একজনকে জিম্মি করে অন্য সদস্যদের ভয় দেখিয়ে দ্রুত টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে সটকে পরে। এরই মধ্যে এই দলের ৭ সদস্য ২ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে। আদালতে দেয়া তাদের জবানবন্দি থেকে বেশকিছু গ্রুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই দলটি রাজধানীর হাতিরঝিল, শেরে বাংলা নগর, পান্থপথ ও লালমাটিয়ায় বেশ কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে।

ডাকাত দলের অন্যতম আরেক সদস্য হলেন বিল্লাল। গ্রেপ্তার বিল্লাল স্বর্ণকারদের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের কাছে বিভিন্ন কৌশলে ডাকাতি করে সংগ্রহ করা স্বর্ণ গলিয়ে বিক্রি করতেন। গ্রেপ্তারের সময়ে তার কাছ থেকে ডাকাতি করা স্বর্ণ বিক্রি করে আয় করা ১৮ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে।

ডাকাতি ও চুরি রোধে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সকল বাড়িওয়ালাদের উচিত তার বাড়ির নিরাপত্তার বিষয়টিরকে গুরুত্ব দেয়া। বাড়ির চারপাশে সিসি ক্যামেরা লাগানো। এছাড়া অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বাসার ভেতরে প্রবেশ করতে না দেয়া। এতে অনেক সময় নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে। অনলাইনের সেবাগুলোর লেনদেন ও সেবা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত। এছাড়া বাড়িতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নথি সংগ্রহ করা।

(ঢাকাটাইমস/০৫মার্চ/ডিএম)