কবিতা
আলোর আলেখ্য
পরাশক্তির প্রসূতি সূর্যের কাছে নতজানু হয়ে বলি,
হে পরাক্রমি প্রভাকর! দয়া করে আমাকে দেখাও
আঁধার কালোর প্রকৃত স্বরূপ!
একমাত্র তুমিই দেখাতে পারো
কোথায় ওদের সূতিকাগার, ওদের বাস্তু-বসতি, লালন বর্ধন?
কোথায় ওরা রাবন-রাজ্য গ’ড়ে আলোর ফুল্কিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে
আহ্নিকের আতশবাতিতে জাহির করে আঁধারের আস্ফালন।
কোন রহস্যের জাদুবলে-
ওরা আলোর এভারেস্ট-শৃঙ্গের চোখের সামনেই দেখায়
কৌতুক-বিদ্রূপের উদ্ধত প্রলয় নাচন?
হনুমানের পুচ্ছের আগুণ যেমন ভস্ম করেছে
পাপের কালো কাফনে মোড়া স্বর্ণলংকা;
তুমিও তেমনি পবিত্র দহনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিত্যই খাক করো
পৃথিবীকে কব্জা করে রাখা আঁধার কালোকে।
শান্তির বৃষ্টিধারা যেমন মিটিয়ে দেয় মাটির খাখা তৃষ্ণা
তেমনি রবিরশ্মিও দূর করে দেয় পৃথিবীর আলোর তিয়াসা;
তোমার আলোর আভায় লেজ গুঁটিয়ে পালায় আঁধারের কালো বিড়াল।
আমার বিনম্র মিনতিতে সূর্যের মন গলে;
দৃপ্তরাগ ছড়িয়ে রাজসিক ভঙ্গিতে বলে,
‘আমি আঁধার ঘুচাতে পারি; আধাঁরকে দেখাতে পারিনা।
যে আলো কালোকে দেখাতে পারে-- সে আবার ক্যামন আলো!
আমি চোখ মেললেই আঁধার নিমেষই হাওয়া;
কালোর সাধ্যি নেই আলোর মুখোমুখি দাঁড়াবার।
সূর্যের উদয় মানে আঁধারের অস্ত;
আলোর উত্থান মানে কালোর পতন।
আলোর স্থিতি মানে আঁধারের লয়,
আমার আগমনে ফুটফুটে আলোকিত দিন;
প্রস্থানে ঘুঁটঘুঁটে আঁধারের রাত।
আলোর আলাজিলা দেখেই কালো গা ঢাকা দেয় গহন গুহায়;
আমি যদি সেখানেও পৌঁছুতে পারি
সেই কালোও দীপ্ত হয় আলোর বিভায়।
তাই বলি, আঁধারের জন্মকুণ্ডলী, কোষ্ঠী-নামার পিছে ঘুরো না;
ওকে তাড়ানোর কাজে মন দাও।
যতো পারো আলো জ্বালো;
যতো নিষ্ঠায় আলোর পর আলো জ্বালাবে,
আঁধার তোতোই দূরান্তে পালাবে।
তাড়াতে হলে তাড়া করতে হয়
অন্যকে পুড়তে হলে আগে নিজেকে পোড়াতে হয়।
আলো জ্বালাতে হলে আগে সূর্যের মতো নিজেকে জ্বালাও।
মোম নিজেকে পুড়িয়ে আলো জ্বালায়
কাঠ আলো জ্বালাতে নিজেকে ভস্ম করে
মেঘ মেঘের ঘর্ষণে বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে জ্বালে বিজুলি আলো।
তুমিও তেমন করে নিজেকে জ্বালাও; আলো ছড়াও।
আঁধারকে যদি আলোর সাগরে ডোবাতে চাও;
আগে নিজেকে পুড়িয়ে নিজে আলো হয়ে যাও।