‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
| আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২১, ১৫:১৮ | প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০২১, ১১:০৮

মার্চ মাস বাঙালি জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। ৭ মার্চ স্বাধীনতার আহবান, ১৭ মার্চ জাতির জনকের জন্মদিন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং মহান স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারে না থেকেও একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ১ মার্চ ১৯৭১ থেকে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) শাসন করেছিলেন। ইতিহাসে এমন নজীর বিরল। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, অফিস-আদালত, বাস, ট্রেন, লঞ্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলেছে বা বন্ধ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। রেসকোর্স ময়দানে ১০ লক্ষ জনতার সামনে ‘ঘরে ঘরে দুর্গ’ গড়ে তুলতে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান তিনি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুরের রাস্তায় রক্ত ঝরেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্রের আঘাতে। মার্চ মাস বাঙালি জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসেই অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশ পরিচালিত হয়।

১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে যে একদিন এই জাতি জেগে উঠবে এবং আত্মনির্ভরশীলতার সাথে বেঁচে থাকবে। পরবর্তী প্রজন্ম একদিন তাদের নিজেদেরকে গায়ের রং দিয়ে নয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট দিয়ে বিচার করবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সেই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭ জিতেছিল, অন্য দুটি আসনে পিডিপি জয়ী হয়। ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৩ মার্চ জাতীয় সংসদ অধিবেশন আহŸান করেছিলেন। কিন্তু ১ মার্চ তা বন্ধ করে দেন।

অর্ধশত বছর আগে, বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে তাঁর জীবনের সেরা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক, বন্দুক এবং মেশিনগানের ভয় দেখানো ও হুমকি উপেক্ষা করে এবং এক মিলিয়ন শ্রোতার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্ছ¡সিত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন: ‘এবার সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তবে পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং পাকিস্তানের সামরিক জান্তা বিপুল ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগকে শাসন ক্ষমতা অর্জন থেকে বিরত রাখার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল।

পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলেন। এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষুব্ধ করেছিল। তিনি বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি কোনও রাজনৈতিক সঙ্কট নয়, পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বাঙালিরা এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করছে।’ তিনি ২ ও ৩ মার্চ ১৯৭১ এ সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেন। বাঙালিদের তার পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। এরপরে, তিনি ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতার ডাক দেন।

নিহতদের স্মরণে শোক দিবস পালন করা হয়েছিল। প্রধান অতিথি হিসাবে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের এক বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি এখানে থাকি বা না থাকি, বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম থাকবে। বাঙালির রক্ত বৃথা যেতে পারে না। আমি না থাকলে ও আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দেবেন। যদি তাদের হত্যা করা হয় তবে যারা বেঁচে থাকবে তারা নেতৃত্ব দেবে। লড়াই যেকোনো মূল্যে চালিয়ে যেতেই হবে।’

৭ মার্চের এক দিন আগে ৬ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের টেলিফোনে কথা হয়। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আগামী ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়।

৭ মার্চের সমাবেশকে মাথায় রেখে ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছিল। যদি পাকিস্তানের বিপরীতে কিছু বলা হয় তবে তা বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী বানাবে। ট্যাঙ্ক, কামান, মেশিনগান সবই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। বিশ্বাসঘাতকদের (বাঙালিদের) প্রয়োজন হলে ঢাকাকে মাটিতে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে এমন পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানি শাসকদের।

বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালিকে মহান মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে। ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং ২০২০ এর ১৭ মার্চ থেকে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছে। এ বছর ২৬ মার্চ ২০২১ মহান স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ জাতির জনকের নির্দেশে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের জীবন ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনময়ে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। এ ক্ষেত্রে ভারতও আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করে। বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্ব ও মৈত্রী সুদৃঢ় আছে এবং থাকবে।

জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বদরবারে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা বন্দর নির্মাণ, প্রায় ১ লক্ষ গৃহহীনের বাসস্থান প্রদান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ৩৪৪ হাজার বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একক নেতৃত্বের সাফল্য। করোনা মহামারিতে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতার মাতা জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাঙালি জাতির আশার বাতিঘর। বাঙালি জাতি তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মার্চের চেতনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক: চেয়ারম্যান, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগ। সাবেক-প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :