শিকলে বাঁধা বোনের পাশে ঝুলছিল বড় বোন

প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০২১, ১৩:১০

রাজীবুল হাসান, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

শিকলে বাঁধা ছোট বোনের পাশে ফাঁসিতে ঝুলছিল বড় বোন মুর্শেদা বেগম। গত বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের নয়াহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ওই গ্রামের মৃত সৈয়দ মিয়ার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মৃত সুহা বেগমের তিন কন্যার মধ্যে নিহত মুর্শেদা একজন। বাকিদের নাম তুহরা বেগম ও মিনা বেগম। তারা তিনজনেই মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানান স্থানীয়রা। নিহত মুর্শেদা একই ইউনয়নের পাহাড়তলা গ্রামের মৃত

ইব্রাহীম দফাদারের স্ত্রী।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মুর্শেদা বেগম গত বুধবার দুপুরে নিজ ঘরে ফাঁসিতে ঝুলে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে জানায় প্রতিবেশীরা।

তারা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হঠাৎ তাদের ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পায় প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘরের দরজা খুলে মুর্শেদার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। এসময় ঘরের ভেতর তার ছোট বোনকে শিকলে বাধাঁ অবস্থায় দেখতে পায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। তাদের আরেক বোন তহুরার থাকেন তার স্বামীর বাড়ি।

স্থানীয়রা আরও জানান, মৃত সৈয়দ মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই ছেলে কাউছার ও শুভ এবং মেয়ে চায়না বেগমও মাঝে মধ্যে মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, মুর্শেদা বেগম ও তার ছোট বোন একই ঘরে থাকতেন। তারা উভয়েই মানসিক রোগী । দীর্ঘদিন হয়েছে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। মুর্শেদার স্বামী তিন বছর আগে মারা গেছে। তাদের এক মেয়ে রয়েছে। তাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়ে স্বামীর বাড়ি থাকায় তাদের দেখাশোনা করার মতো তেমন কেউ নেই। এর মধ্যে আবার সংসারের আয় রোজগার করার মতোও কেউ নেই।

এলাকাবাসী আরও জানায়, তাদের সৎ বোন চায়না বেগম বলেন, ‘আমার সৎ তিন বোন। তারা অনেক দিন ধরে মানসিক রোগী। তাদের মধ্য এক বোন তহুরা। তিনি স্বামীর বাড়িতে থাকেন। অপর দুই বোন একটি ঘরে থাকতেন। গতকাল খবর পেয়ে বাবার বাড়ি এসে দেখি বড় বোন মুর্শেদা ‘আত্মহত্যা’ করেছে। তাদের খাবারের কোন ব্যবস্থা ছিলো না। সৎ ভাইয়েরা যা দিত তাই খেয়ে দিন পার করত।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য হযরত আলী জানান, পরিবারটির নানার বাড়ির আত্মীয় স্বজনসহ অনেকেই মানসিক রোগী। ধারণা করা হচ্ছে বংশগতভাবেই এই সমস্যা হয়ে আসছে। চিকিৎসা করালে কয়েক মাস ভালো থাকে আবার একই সমস্যা হয়। তাদের মধ্য বড় বোন মুর্শেদার স্বামী মৃত্যুর পর মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। দুই বোন তাদের বাবার বাড়ির একটি টিনের ঘরে থাকত। বৃহস্পতিবার বিকালে মুর্শেদার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৭মার্চ/পিএল)