পরীক্ষামূলক ত্বীন ফল চাষ করছেন দিনাজপুরের মান্নান

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২১, ১৬:৪৮ | প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০২১, ১৫:৪৫

বিদেশি ফল ড্রাগনের পর দিনাজপুরে এবার পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন। গাছে পর্যাপ্ত ফলের সমাগমে লাভের আশা দেখছেন নবাবগঞ্জের যুবক মতিউর মান্নান। ডুমুর আকৃতির এই ফল দৃষ্টি কেড়েছে এলাকার মানুষের। এছাড়াও এই ফলের বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অনেক মানুষের।

তার এই ত্বীন চাষে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।

মতিউর মান্নান বলেন, ‘করোনা মহামারীতে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো দেশ। আর এসময় ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম আমি। এরপর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি। পরে ছোট বোনের পরামর্শে গাজীপুর থেকে ৯০০ ত্বীন ফলের চারা এনে গেল বছরের অক্টোবর মাসে চার বিঘা পতিত জমিতে চাষ শুরু করি। বাগান করতে গিয়ে ২৩ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ভয় পেলেও চারা রোপণের দেড় মাসের মাথায় গাছে ফল আসতে শুরু করায় আমি খুব খুশি। দুই-একটি করে ফল পাকতে শুরু করেছে। ঢাকার বাজার ফলটি চাহিদা অনেক, দামও ভালো। প্রতিকেজি ফল বিক্রি হয় এক হাজার টাকা দরে।’

গাছে আশাতীত ফল দেখে মহাখুশি মতিউর মান্নান। তিনি জানান, এ বছর ভালো লাভের আশা করছেন তিনি। আগামীতে এ ত্বীন চাষে জমির পরিমানও বাড়াবেন তিনি। এজন্য আরো আট বিঘা জমি প্রস্তুতের কথাও জানিয়েছেন মতিউর মান্নান।

তার বাগানের ফল দেখতে ও চাষ পদ্ধতি জানতে দূর-দুরান্ত থেকে ভিড় করছে অনেকে।

হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা থেকে ত্বীন বাগান দেখতে আশা শাহীনুর হোসেন জানালেন, তিনি ত্বীন বাগান দেখে অভিভূত হয়েছেন। এবং নিজে প্রাথমিকভাবে আড়াই বিঘা জমিতে ত্বীন বাগান করবেন বলে মনে করছেন।

বাগান দেখতে আসা রোকন ও জুলহাজ বলেন, ‘আমরা শুধু ফেইসবুক, টিভিতে দেখি ত্বীন ফল। পবিত্র কোরআনেও এই ফলের নাম আছে। আজ বাগানে এসে বাস্তবে ফলটি দেখতে পেরে আমাদের অনেক ভালো লাগল। ফলগুলো দেখতে ডুমুর আকৃতির। ফলটি আমাদের এলাকায় প্রথম চাষ হচ্ছে। ফলের বাগান দেখে আমাদের এরকম বাগান করা ইচ্ছে হচ্ছে। আমরা বাগান দেখার পাশাপাশি মতিউর মান্নানের কাছ থেকে এই ফল চাষের পদ্ধতি সর্ম্পকে অনেক কিছু জানলাম। আমরা ভবিষতে এরকম বাগান করব।’

বাগানের শ্রমিক লাবলুসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘আমরা ১০ জন ত্বীন ফলের বাগানে কাজ করছি। করোনায় কোনো কাজ কর্ম ছিল না। মতিউর ভাই ত্বীন ফলের বাগান করায় এখানে আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।এখানে কাজ করে আগের থেকে আমাদের সংসার অনেক ভালো চলছে। মতিউর ভাইয়ের মতো এলাকায় আরো যদি কেউ বাগান তৈরি করে তাহলে আরো বেশকিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।’

চাষি মতিউর মান্নান বলেন, ‘বাগান সম্প্রসারণ করতে ইতোমধ্যে আমি গাছে কলম করতে শুরু করেছি। কলমগুলো করে বাগান সম্প্রসারণের পাশাপশি সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারব।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশে গাজীপুরের পর প্রথমবারের মত আমাদের এলাকায় এই ফলে চাষ শুরু করেছে কৃষক মতিউর মান্নান। ত্বীন ফলটি মরুভূমির এলাকার বেশি পাওয়া যায়। এটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তাছাড়াও এর ওষুধি অনেক গুণাবলি রয়েছে। কেউ যদি এই ফলের বাগান নতুন করে তৈরি করতে চায় আমাদের কৃষি অফিস তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’

তিনি আরো জানান, এই ফল চাষাবাদে ও ভালো ফলন পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাগান পরিদর্শনসহ মান্নান নামে ওই কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তার উপজেলাতে প্রথমবারের মত চার বিঘা জমিতে লাগানো হয়েছে পাঁচ জাতের নয়শ ত্বীন ফলের গাছ। সরকারি সহযোগিতা পেলে ফলটি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৭মার্চ/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :