ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়, ক্ষতির মুখে কৃষক

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
| আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২১, ১৬:৩৩ | প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০২১, ১৬:২৯

ফসলি জমির মাটি দিয়ে ইট তৈরিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর কোনো তোয়াক্কাই করছে না ফেনীর ইটভাটার মালিকরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, মুনাফালোভীদের কাজে লাগিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে ট্রাকে ও ট্রলিতে করে মাটি নিয়ে যাওয়া হয় ইটভাটায়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা।

মাটি বিক্রি করেছেন এমন কয়েকজন কৃষক জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য এক শ্রেণির দালাল চক্র গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায় এবং স্বল্পমূল্যে উপরিভাগের এসব মাটি কেটে কিনে নেয়। আর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কথা না জেনে এভাবেই কৃষকেরা নগদ লাভের আশায় জমির মাটি বিক্রি করেন।

ফেনীর সদর উপজেলার উত্তর কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ, চাষি মোহাম্মদ ইলিয়াস, কৃষক একরামুল হক ও উত্তর কাশিমপুর গভীর নলকূপ (সেচপাম্প) বিএডিসির স্কিম ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানান, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পরপরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। আর এসব মাটি ট্রাকে ও ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন ইটভাটায়।

কৃষক আবদুর রহিম বলেন, ‘পাশের জমির মাটি বিক্রি করায় আমার রোপা বোরো ধানের জমির আইল ভেঙে গেছে। দীর্ঘ ফাটল ধরে জমির পাড় ভেঙে পড়ছে।’

এদিকে মাটি কাটার মেশিনের মালিক ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি আর মাটি কাটার জন্য মেশিন ভাড়া দেব না। জমির মূল্য থেকে মাটি বিক্রি করে অনেক বেশি দাম পাচ্ছেন মালিকরা। যে কারণে তারা লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করছে ইটভাটায়। ফলে পাশের জমিগুলো ভেঙে পড়ে যাচ্ছে।’

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর কাশিমপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবদুর রব বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে বোরো আবাদ করেছি। জমিতে অনেক টাকা খরচ করে সারও দিয়েছি। পাশের জমি থেকে গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় আমার ধানের চারাসহ জমিন ভেঙে পড়ছে।’

কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার জমির পাশের জমির মালিক ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছেন। তাকে আমরা মাটি বিক্রি না করতে অনুরোধ জানালেও তিনি অনুরোধ রাখেননি। এভাবে মাটি বিক্রি করলে ফসল উৎপাদন কমে যাবে এটাও তাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু মানুষ নগদ টাকার লোভে আমাদের কৃষির ক্ষতি করছেন।’

অন্যদিরক নাম প্রকাশে অনিচছুক কয়েকজন ইটভাটার মালিক বলেন, ‘ফসলি মাটি না পেলে আমাদের ইটভাটা কিভাবে চলবে? ইটের চাহিদা থাকায় তারা অতিরিক্ত দাম দিয়ে কৃষকদের ম্যানেজ করে মাটি ক্রয় করছেন, জোর করে নয়। সরকার ইটভাটার অনুমোদন দিলেও মাটি না পেলে তা কিভাবে চালবে।’

দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাসুদ রায়হান বলেন, ‘এখানে পাঁচটি ইটভাটা রয়েছে। মাটি কাটার কারণে সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষিজমিও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বারবার বাধা দেওয়ার পরও তারা মানছেন না। উল্টো তাদের শত্রু হয়ে যাচ্ছি। প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয়, আমাদের কিছু করার নেই।’

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, মাটি কাটা প্রতিরোধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানা আদায় করছে।

(ঢাকাটাইমস/৭মার্চ/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :