ওয়েবিনারে বক্তারা

লকডাউনে নারীর প্রতি বেড়ে যাওয়া সহিংসতা কমছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০২১, ২০:৩৯

বাংলাদেশে করোনাকালে লকডাউনের মধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতা যেভাবে বেড়ে গিয়েছিল তা আস্তে আস্তে কমে এসেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে লকডাউনের সময় বেড়ে যাওয়া সহিংসতা কমে এসেছে বলে মত দিয়েছেন বক্তারা।

রবিবার কোভিড-১৯ এর আক্রমণ মোকাবিলা, চ্যালেঞ্জসমূহ এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে করণীয় বিষয়ে মিউনিসিপাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ম্যাব), ইউএনডিপির এলআইইউপিসি প্রকল্প ও এফসিডিও- এর যৌথ আয়োজনে ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির কারিগরি সহায়তা দেয় নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশ (ইউডিজেএফবি)।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমাতায়ন, নারী শিক্ষার প্রসার ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশে নারী অধিকার ও শিক্ষার মান উন্নয়ন হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির শুরুতে দেশে নতুন সংকট দেখা দিয়েছিল। এ ভাইরাসটি নতুন থাকায় সব সেক্টরে স্থবিরতা নেমে আসে। এতে কর্মক্ষেত্রে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরিবারেও নারী নির্যাতনের ঘটনা কিছুটা বেড়ে যায়। আর্থিক সংকটে পড়া নারীদের সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরণের সহায়তা দেয়া হয়েছে। কর্ম হারানো নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তাছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপের কারণে তা অনেকাংশেই কমে এসেছে।

ওয়েবিনারে জানানো হয়, করোনার কারণে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও জীবিকা অর্জনের সকল ক্ষেত্রসমূহসহ সকল কিছুর ওপর প্রভাব পড়েছে। এ ভাইরাসের কারণে শহুরে দরিদ্রদের জীবন ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নগর অর্থনীতি যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। কোভিড-১৯ সংকটটি সবাইকে প্রভাবিত করেছে, তবে নারী ও মেয়েরা আলাদাভাবে অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্রভাবিত হচ্ছে, যা বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে নারীদের মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক পরিণতি হতে পারে যেহেতু মহিলারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, বৃদ্ধ, শিশু এবং তাদের পরিবারের সুস্বাস্থ্য, এবং যত্ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চে সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকে নারীর প্রতি সহিংসতার সংখ্যা ও মাত্রা বাড়তে থাকে। একের পর এক নির্যাতনের ঘটনায় দেশের বড় বড় বেসরকারি সংস্থা থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংস্থা সবাই দেশব্যাপী নানা গবেষণা করেন। গবেষণা তথ্য বলছে, করোনার এই সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। বেড়েছে প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ ও বাল্যবিবাহ।

ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, নভেম্বরের শেষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক কর্তৃক দেশের ৫৯ জেলার ১০ লাখ নারীর অংশগ্রহণে করা এক জরিপে দেখা যায়, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪০ হাজার নারী পারিবারিক সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী প্রথমবারের মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

সংস্থাটি জানিয়েছে, লকডাউন চলাকালে নারীর ওপর সহিংসতার মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। জরিপে দেখা গেছে, পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা বেশি। স্কুল বন্ধ থাকায় বাল্যবিবাহও থেমে থাকেনি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, জানুয়ারি ২০২০ থেকে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৪৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিশু-কিশোরীই বেশি যাদের বয়স ৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ গত মে মাসে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে। তারা জানায় দেশের ২৭টি জেলায় এপ্রিল মাসে চার হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ টি শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে।

ম্যাবের সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ইউএনডিপির এলআইইউপিসি প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মান্নান, ম্যাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কতোয়াল, মহিলা অধিদপ্তরের মাহাপরিচালক রাম চন্দ্র দাস, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ম্যাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাক খালেদ হোসেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ইউডিজেএফবি’র সহ-সভাপতি কাররুন্নাহার শোভা, সাধারণ সম্পাদক সোহলে মামুন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল খান প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/৭মার্চ/বিইউ/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :