প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে প্রথম ৭ মার্চ পালন করল বিএনপি

প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০২১, ২১:২৭ | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২১, ২১:৩০

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন করেছে বিএনপি। রবিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছিল। তবে তাদের বক্তব্যের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল সরকারের সমালোচনা।

প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের বিএনপির ৭ মার্চ পালনকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগে নেতারা। খবর বিবিসি বাংলার।

বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকায় তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে বাঙালিকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রতিবছর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো এই দিনটি বিশেষ মর্যাদায় পালন করলেও বিএনপি এবারই প্রথম দিনটিকে ঘিরে কর্মসূচি পালন করে যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মার্চ মাসজুড়ে যে ১৯ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি তারমধ্যে ৭ মার্চকেও রাখা হয়।

এ নিয়ে প্রেসক্লাবের আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তারা কোনো দলকে ছোট করার জন্য এই আলোচনা করছেন না, কারণ ১৯৭১ সালে বিএনপির জন্ম হয়নি। মূলত সুবর্ণজয়ন্তী পালনের একটি দিন হিসেবে বিএনপি ৭ মার্চ পালন করছে বলে তিনি জানান।

সাতই মার্চের ভাষণ ঐতিহাসিক এবং জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিল উল্লেখ করে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সেখানে বক্তব্য রেখেছিলেন সেই সময়ের অবিসংবাদিত নেতা জনাব মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। তার ভাষণে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশনা ছিল, আমরা তা অস্বীকার করি না।’

তবে বিএনপির এই কর্মসূচি পালনকে স্বাগত জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একে ভণ্ডামি বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এর কারণ হিসেবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির শাসনামলে শেখ মুজিবুর রহমানের এই ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করা কার্যত নিষিদ্ধ ছিল। ওই ভাষণ প্রচারের দায়ে অনেককে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সাতই মার্চ উপলক্ষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, এক সময় যারা ৭ মার্চকে নিষিদ্ধ করেছিল তারাই এখন রাজনৈতিক কূট-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে দিনটি পালন করছে। যদিও গত মাসে ওবায়দুল কাদের একে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

বিএনপি যখন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তার পর পরই ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন যে, বিএনপির এই কর্মসূচির ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক আবহ তৈরি হবে।

তবে বিএনপির আলোচনা সভা ৭ মার্চকে ঘিরে আয়োজিত হলেও দলীয় নেতাদের বক্তব্যের বড় অংশজুড়েই ছিল ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সত্যকে এড়িয়ে দলীয় ধারণা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সঠিক ও ইতিহাস তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করে একটি ভ্রান্ত ইতিহাস দিচ্ছে। তারা ধারণা দিচ্ছে যে, এই দেশে একটাই দল, একটাই ব্যক্তি যারা এই দেশের সব এনে দিয়েছে। আমরা নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে চাই। এই দেশ গঠনের পেছনে তাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম ছিল।’

শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক এই ভাষণটির তাৎপর্য আছে বলেই ২০১৭ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে দলের নেতারা উল্লেখ করেন। জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষায় ভাষণটি প্রকাশ হয়েছে বলে জানা গেছে।

(ঢাকাটাইমস/০৭মার্চ/জেবি)