ছবির ওপরে কবিতা লিখতে পছন্দ করি: সাবরিনা রুবিন

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২১, ১২:০৬ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১, ১৪:০৩

শেখ সাইফ

সাবরিনা রুবিন। কবি ও গদ্যকার। পড়েছেন চিকিৎসাশাস্ত্রে। পেশা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন তাই। কিন্তু লেখালিখি কিংবা সাহিত্যচর্চাতেও নিজেকে খুঁজে পান তিনি। তার কবিতা ও লেখায় মূর্ত হয়েছে মানবপ্রেম, প্রকৃতি এবং মানুষের মনদৈহিক জগৎ। বাংলা ও ইংরেজি দুই মাধ্যমেই লেখেন তিনি। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ তিনটি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লিমিটলেস লাভ’, দ্বিতীয়টি ‘সাডেন স্প্রিং এগেইন’ এবং এ বছর প্রকাশিত হয়েছে ‘নিষিদ্ধ নির্বাসন’।  রবিবার তার সঙ্গে আলাপে উঠে এসেছে লেখক জীবনের কিছু কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ সাইফ

 

সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হলেন কোন বয়সে?

 

আমি স্কুলজীবন থেকেই সাহিত্যপাঠের লেখালিখির চেষ্টা করতাম। কিছু কিছু লেখা ছাপাও হতো। আমি ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল ম্যাগাজিনে কবিতা লিখতাম। পরবর্তী সময়ে মহামারি করোনার লকডাউনের সময় বাংলাতে কবিতা লেখার ওপর জোর দিয়েছি। এখন মূলত বাংলাতেই কবিতা লিখছি।

 

লেখালিখিতে কবিতাটা বেছে নিয়েছেন কেন? সেই অনুভূতিটা যদি বলতেন।

 

লেখার ক্ষেত্রে কবিতাটাই আসলে বেছে নিয়েছি তা নয়। ছোট ছোট গল্পও লিখি। তবে কবিতাতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এজন্য কবিতা লেখাকেই বেছে নিয়েছি। আর ইংরেজিতে বড় বড় গল্প লেখা আমার মনে হয় খুব দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে ছোটখাটো ইংরেজি কবিতা লেখা যখন শুরু করি তখন বেশ ভালো লেগেছে। এত বেশি শব্দভাণ্ডার। লেখার এত যে ছন্দ বা লেখার ক্ষেত্রে যে খেলা করা যায়। এটা খুব উপভোগ করি, এজন্য লিখি।

 

লিমিটলেস লাভ আপনার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ?

 

আমার প্রথম লেখা ভালোবাসার একটি কবিতা দিয়ে। এটা ২০১১ বা ২০১২ সালের দিকে হবে। কাব্যগ্রন্থ হিসেবে লিমিটলেস লাভটা প্রথম ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ।

 

ভালোবাসার কবিতায় মানুষের বাইরে প্রকৃতি কি শক্তিশালী বিষয় হয়ে উঠতে পারে?

 

আমার লিমিটলেস লাভ কাব্যগ্রন্থে শুধু ভালোবাসা না মানুষের মানসিক সমস্যা নিয়ে, প্রকৃতি নিয়ে কথা আছে। এখানে একটা কবিতা আছে শরৎকাল নিয়ে। আমি রাশিয়াতে অটাম সিজন বা শরৎকালে গিয়েছিলাম। ওখানের প্রকৃতির ব্যাপারটা আমার খুব আলোড়িত করেছিল। আমি প্রকৃতিও নিয়ে লিখি। আমি ছবি নিয়ে লিখি। ছবির উপরে কাজ করি। আমি যেকোনো ছবি দেখি। সেই ছবির ওপরে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। শুধু যে প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে লিখব তা নয়।

 

আপনার কবিতায় একটা সবুজ কাঁঠাল পাতা শুকিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে জানতে চাই

 

আমাদের পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবকিছুই কিন্তু অল্প থেকে বড় হয়। বড় হয়ে এক সময় হারিয়ে যায়। পৃথিবীর সবকিছুই ধ্বংস হবে। আবার নতুন করে তৈরি হবে। যতদিন পৃথিবী আছে। তারপর পৃথিবীও একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবেই লেখা কবিতার ভাবটা।

 

কিন্তু কবিতায় এই যে শেষ হয়ে যাওয়াটা, সেটা মানতে চাননি আপনি। এটার অনুভূতি কীভাবে প্রকাশ করবেন?

 

কবিতায় আমি বোঝাতে চেয়েছি, আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু... হতে চাচ্ছি না। কিন্তু আমিও একদিন শেষ হয়ে যাব। এখানে এটাই বোঝাতে চেয়েছি। আমি চাই না শেষ হয়ে যেতে কিন্তু আমাকেও শেষ হয়ে যেতে হবে। এটা একটা নিদারুণ বাস্তবতা। না চাইলেও যেতে হবে।

 

চিকিৎসা পেশা ও শিল্পসাহিত্য চর্চা এ দুটোর সমন্বয় আপনি কীভাবে করেন?

 

আমি করোনাকালীন সময় থেকে বিরতিতে আছি। আমি একটা ট্রেনিংয়ে ছিলাম ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ-এ। করোনার কারণে আমি আপাতত ওই প্রশিক্ষণে যাচ্ছি না।  সামনে আবার প্রশিক্ষণ আছে সেটাতে যেতে হবে। এছাড়া আমার জব আছে। আর আমার প্রধান উদ্দেশ্য মেন্টাল হেলথ বা মানসিক সমস্যার চিকিৎসা নিয়েই কাজ করব। এখনো সমন্বয় করার সুযোগ হয়নি, আগে যেটা করতাম। আগে তো আমি রাতে লিখতাম। রাতের খাওয়া শেষ করে সম্পূর্ণ সময়টা সাহিত্য চর্চায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম। এছাড়া আমি ইনটারন্যাশনাল ম্যাগাজিনে যাদের সঙ্গে আমি কাজ করতাম তাদের সঙ্গেও সময়টা সন্ধ্যার পরেই হতো। কারণ বিভিন্ন দেশের লোকজন আমেরিকা, ইউরোপ, রাশিয়ার যারা সবারই আমাদের রাত আর তাদের দিন। তো ওইভাবেই সমন্বয় করতাম।

 

কবিতায় বর্তমানে নারী অধিকার নিয়ে কতটুকু লেখা হচ্ছে বলে মনে করেন?

আসলে আমার নারী-পুরুষের ভেদাভেদ তেমন চোখে পড়ে না। এখন কিন্তু নারী-পুরুষ একেবারে কাছাকাছি থাকে। এখন যে নারীদের খুব বেশি ছোট করে দেখা হয় বা হচ্ছে সেটা আমি মনে করি না। আমি নারী নিয়ে লিখেছি। নারী দিবস নিয়ে লিখেছি। এই তো গতকালও একটা উৎসবে নারী নিয়ে একটা কবিতা ছিল আমার। আমার মা, নানি, মেয়ে ও আমি নিজেই একজন নারী। নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা আমার অনেক বেশি। নারীরা এখন অনেক উচ্চস্থানে আছে। তারপরও আমি বলি নারীবাদী হয়ে নারীদের অধিকার আদায় করতে হবে। এভাবে আমি ভাবি না। আমরা কিন্তু এখন সব বিষয়ের কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছি। কাজ করছি। আমাদের কেউ আটকিয়ে রাখছে না। আমরা গৃহকর্মী থেকে শুরু করে অফিশিয়াল কোনো না কোনোভাবেই যুক্ত আছি। প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। আমাদের নারী অধিকারটা খুব বেশি নিশ্চিত করা হচ্ছে।   

কবি ও চিকিৎসক সাবরিনা রুবিন যশোর জেলার সবুজ শ্যামলঘেরা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা এম এইচ মাসুদ ও মা সুলতানা। সাবরিনা রুবিন প্রকৃতির সান্নিধ্যে বড় হয়েছেন। লেখনীতে প্রকৃতির প্রেমের ছাপ খুব বেশি ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করায় কবির সত্তায় মিশে আসে কবিতা প্রেম। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ কবি শিল্প-সাহিত্য চর্চায় বেশ দক্ষতার সাথে এগিয়ে চলেছেন। লিখে চলেছেন নিরন্তর। বহু প্রতিভার অধিকারী এ কবি রুমানিয়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক সংগঠন মুনির মেইজীদ ফাউন্ডেশনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণ কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি ইয়াসির আরাফাত বিশ্ব শান্তি পুরস্কারসহ নানাবিদ সনদ, ডিপ্লোমা ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/এসকেএস/এইচএফ)