‘চিৎকার করলেই অধিকার আসে না, আদায় করে নিতে হয়’

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২১, ১৪:০৭ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১, ১৬:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে নারীদের শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নারী অধিকার দাও, নারীর অধিকার দাও- বলে চিৎকার করে ও বক্তব্য দিলেই হবে না। খালি আন্দোলন করলেই অধিকার আদায় হয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’

সোমবার ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১’উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শিশু ও মহিলাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরার সভাপতিত্বে শিশু একাডেমিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব।’গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে নারীরা সর্বক্ষেত্রে সুযোগ পাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে মেয়েরা সুযোগ পাচ্ছে। খেলাধুলা এভারেস্ট বিজয় থেকে সর্বক্ষেত্রে নারীদের বিচরণ আছে। সব জায়গায় নারীরা সুযোগ পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরেই নারীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই চিন্তার ফসল।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘নারীদের অধিকার দাও, নারীদের অধিকার দাও বলে শুধু চিৎকার করা বা বলা আর বক্তৃতা দেওয়া এতে কিন্ত অধিকার আসে না, অধিকারটা আদায় করে নিতে হবে। আদায় করবার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আর সেই যোগ্যতা আসবে শিক্ষা দীক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর এদেশে নারী শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। কারণ অনেক সময় অনেকেই মেয়েদের জন্য শিক্ষার খরচ করতে চায় না। সেজন্য নারী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক করে দিয়েছেন। প্রাথমিক পর্যন্ত সম্পন্ন অবৈতনিক করে দিয়ে যান তিনি। আমরা সরকারে এসে একেবারে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি এবং প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা তহবিল ট্রাস্টে প্রায় ৭৫ ভাগই মেয়ের পেত, এখন প্রায় ৭০ ভাগ মেয়েরা পেয়ে থাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয় তাহলে শিক্ষার ক্ষেত্রেও নারীদের সুযোগ দিতে হবে। এখন সব জায়গায় নারী, এসপি, ডিসি, ইউএন, ওসি থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই মেয়েদের অবস্থানটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সমাজের অর্ধেক যদি অকেজো থাকে সেই সমাজ তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। আর সংসদের কথা নাই বললাম। বর্তমানে সংসদে স্পিকার নারী, বিরোধী দলীয় নেতা নারী, উপনেতা নারী, সংসদ নেতা সবই মহিলা রয়েছে। সেটা আমরা স্থান করে নিয়েছি। কাজেই আমি মনে করি এটাই আমাদের সব থেকে বড় অর্জন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ধর্মের নাম নিয়ে সামাজিকতার কথা বলে মেয়েদের ঘরে বন্দি রাখার একটা প্রচেষ্টা ছিল। সেই অচলায়তন ভেদ করে বের হয়ে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে।

নারীকে সাবলম্বী হতে হলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বিকল্প নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই বিবেচনায় নারী শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে সরকার। নারী সুরক্ষার জন্য করা হয়েছে আইন। অথচ ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে নারী নির্যাতন আইন খর্ব করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে রাজশাহীতে প্রমীলা ফুটবল হতে দেয়া হয় নাই। দেশের অবস্থা এখন বদলেছে। ধর্মের নামে মেয়েদের বন্ধ করে রাখার অচলায়তন ভেঙে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য পাঁচ সংগ্রামী নারীকে জয়িতা পদক দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জয়িতাদের সংগ্রামী জীবন যুদ্ধের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/এমআর