ঘোষিত সময়ের আগেই কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান হবে

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২১, ১৬:৫২ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১, ১৭:৪৪

সৈয়দ ঋয়াদ

প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সরকারের নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। এই সংস্থার মহাপরিচালক (ডিজি) রাম চন্দ দাস বলেছেন, নারীরা ক্রমাগত পর্দার সামনে কিংবা আড়াল থেকে আমাদের জাতীয় আয়ে অবদান রেখে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নারীবান্ধব নীতির কল্যাণে প্রতিদিন দেশের নারীরা কর্মক্ষেত্রে নতুন উদ্দীপনায় যুক্ত হচ্ছেন। নারীর বিরাট অংশগ্রহণের ফলে দেশের অর্থনীতি এই করোনা মহামারিকালেও স্থিতিশীল আছে। তার আশা, নারীরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে ২০৪১ সালে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমান সংখ্যক নারী কাজ করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন,  তার আগেই হয়তো এই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ।

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিনটি সামনে রেখে নারী ও শিশুসংক্রান্ত সমসাময়িক বিষয়ে নিয়ে ঢাকা টাইমসের মুখোমুখি হয়েছিলেন মহিলা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রাম চন্দ দাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক সৈয়দ ঋয়াদ।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য নিয়ে জানতে চাইছি।

এই দিনটি সারা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত নারীদের প্রতি সম্মান জানানোর জন্যই দিনটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এবার নারী দিবসের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে যে মূল প্রতিপাদ্য বা মূলমন্ত্র নির্ধারণ করা হয়েছে, আমরা সেটার ভাবানুবাদই করেছি। সেটা হলো ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব। আন্তর্জাতিকভাবেও এটাই নারী দিবসের প্রতিপাদ্য।

দেশে গত চার বছরে নারী ওপর সহিংসতার পরিসংখ্যান গণমাধ্যমে এসেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়া পরিস্থিতিকে আপনারা কীভাবে দেখেছেন?

নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা নিঃসন্দেহে উদ্বেকজনক। আমাদের সমাজকে সুন্দর করতে ও সমতার বিশ্ব তৈরিতে নারীর ভূমিকা অনেক। এখানে বিভিন্ন ধরনের সরকারি কর্মসূচি আছে। এসব কর্মসূচি নারীদের সচেতন করা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটলে তার থেকে প্রতিকারের  বিষয়েও কাজ করে মহিলা অধিদপ্তর। আমাদের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার রয়েছে। এ ছাড়া নারী বা শিুশুর প্রতি যেকোনো সহিংসতায় প্রতিকার বা প্রতিরোধ করতে অধিদপ্তরের নিজস্ব হেল্পলাইন রয়েছে ‘১০৯’।  এই নম্বরে কল করে সমস্যার কথা জানালে অবস্থার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ঠেকাতে ১০৯ কতটা কার্যকর?

এই হেল্প লাইনটি দিনরাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। যেই এলাকার যাকে বললে প্রতিকার পাওয়া যাবে ফোন করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ হাজার ফোন আসে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে।

সহিংসতাায় শিকার কিংবা সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য অধিদপ্তর কী ধরনের কাজ করে থাকে?

মহিলা অধিদপ্তর সারা দেশে সুবিধাঞ্চিত নারীদের ১০টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। দেশের ৮টি বিভাগের আওতায় ৬৪ জেলায় ৪২৬ উপজেলায় এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্খা রয়েছে। সু্িবধাবঞ্চিত ১৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীরা এই সুযোগ পেয়ে থাকেন।

তাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে অধিদপ্তর কী ভ’মিকা পালন করে?

কর্মক্ষেত্র সরাসরি  প্রবেশ না করালেও তাদের জন্য ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা  রয়েছে। খুব বেশি নয়, ১৫ হাজার টাকা। এই ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর একটি প্রস্তাবও আছে, যেন একটু বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে পারে। আমাদের টার্গেট হলো তাদের সচেতনতার পাশাপাশি উদ্যোক্ত হিসেবে আত্মপ্রকাশে সহযোগিতা করা।
 

সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, ল্যাকটেটিং তহবিল কতটা কার্যকর?

বাংলাদেশের প্রতিিিট জেলা-উপজেলাতেই কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত নারীদের ‘ল্যাকটিটিং মাদার সহায়তা তহবলি’ থেকে ভাতা প্রদানের কার্যক্রম রয়েছে। এসব বিষয়ে বেশবড় পরিসরে কাজ হচ্ছে। যেন শিশু ও মাতৃত¦কালীন পুষ্টি কিংবা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশু কোনো ধরনের পুষ্টি ঘাটতিতে না পড়ে।

মহিলা অধিদপ্তরের একটি অন্যতম উদ্যোগ কর্মজীবী হোস্টেল। এসব  হোস্টেলের আসন সংকট নিয়ে প্রায়ই খবর আসে পত্রিকায়।

কর্মজীবী নারীদের নিরাপত্তা, তাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ এটি। প্রতিটি নারী যেন দিন শেষে নিরাপদভাবে আবাসন পায় সেজন্যই কর্মজীবী নারী হোস্টেল করা হয়েছে। রাজধানী ছাড়াও প্রয়োজনে জেলা উপজেলা পর্যায়েও আরও কর্মজীবি নারী হোস্টেল তৈরি হবে।

দেশে সরকারিভাবে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র্র পরিচালনা করছে আপনার অধিদপ্তর। দেশের সব জায়গায় এখনো গড়ে ওঠেনি।

এটা প্রাথমিকভাবে দেশের সব জেলাতে স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় যেখানে কর্মজীবী নারী বেশি সেখানেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে। সরকারে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এটি।

জাতীয় উন্নয়নে নারীর অবদানকে কীভাবে দেখেন?

মাননীয়  প্রধানমন্ত্রীর নারীবান্ধব নীতির কল্যাণে প্রতিদিন আমাদের দেশর নারীরা কর্মক্ষেত্রে নতুন উদ্দীপনার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারিতেও বাংলাদেশের অর্থনীতি কিন্তু একটি স্থিতিশীল ধারায় এগিয়ে চলেছে। এর পেছনে বড় অবদান কর্মক্ষেত্র বিশাল সংখ্যক নারী যুক্ত আছেন বলে। এই নারীরা ক্রমাগত পর্দার সামনে কিংবা পর্দার আড়াল থেকে আমাদের জাতীয় আয়ে অবদান রেখে চলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ২০৪১ সালে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমান সংখ্যক নারী কাজ করবে। আমরা তার আগেই হয়তো এই লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।’

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকে ও ঢাকা টাইমসকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/মোআ)