সম্পত্তির জন্য দুই ভাই মিলে বোনকে হত্যা

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২১, ১৯:০৪

অনলাইন ডেস্ক

সম্পত্তির লোভে নিজ বোনকে ঢাকা থেকে নেত্রকোণা নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ নদীতে নিক্ষেপ করে দুই ভাই। পরে বোন  নিখোঁজ জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করে। তবে এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি ঘাতক দুই ভাই শফিউল আজম ও শামীম হোসেনের।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক দুই ভাই মিলে বোন শামীমা বেগমকে (৪০) হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। সোমবার (৮ মার্চ) বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের কনফারেন্স রুমে কুষ্টিয়ার নবাগত পুলিশ সুপার খাইরুল আলম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনের পুলিশ সুপার বলেন, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া গ্রামের মৃত আশরাফ উদ্দিনের ছেলে বর্তমানে ঢাকার দক্ষিণখান কাঁচা বাজার সংগ্রামী সরণী রোডের ৩১২ নং বাসার বাসিন্দা শফিউল আজম (৫২) গত ৪ মার্চ কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় উপস্থিত হয়ে একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। জিডি নং ১৫২।

জিডিতে শফিউল উল্লেখ করেন, তার বোন শামীমা বেগম(৪৪) গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর রানাখড়িয়ায় বেড়াতে যাবার উদ্দেশ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রওনা হন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮ টা পর্যন্ত বোনের সঙ্গে মুঠোফোনে তার যোগাযোগ হয়। এর পর থেকে বোনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

জিডির সূত্র ধরে পুলিশ রবিবার কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকা থেকে প্রথমে শফিউল আজমের চাচাতো ভাই শামীম হোসেনকে (৪০) আটক করে। পরে ওই দিনই শাফিউল আজমকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে শামীম পুলিশকে জানান, তার চাচাতো ভাই শফিউল আজম কিছু দিন আগে তার চাচাতো বোন শামীমাকে নেত্রকোণা নিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছে সাহায্য চান।

শামীম পুলিশকে জানান, শামীমার মা মারা যাওয়ার পর চাচাতো ভাই শফিউল আজম অন্য এক মহিলাকে মা সাজিয়ে তার মায়ের নামে ঢাকায় ছয়তলা বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেয়। জালিয়াতি করে বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে শফিউলের বাবা আশরাফ উদ্দিন বাদী হয়ে ছেলের নামে ঢাকায় সিভিল কোর্টে মামলা করেন। ওই মামলার অন্যতম স্বাক্ষী ছিলেন বোন শামীমা বেগম।

প্রায় ৩০ বছর আগে নেত্রকোণা সদরে শামীমের বিয়ে হলেও অল্প দিনের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। সেই থেকে শামীমা ঢাকাতে বাবার বাড়িতেই বসবাস করতেন। কিন্তু শামীমাকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন শফিউল। ভাইয়ের অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য এক পর্যায়ে শামীমা তার স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।

সম্পত্তি জালিয়াতির মামলায় যাতে বোন স্বাক্ষী দিতে না পারে এ জন্য বোন শামীমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন দুই ভাই শফিউল ও শামীম। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শামীম হোসেন তার চাচাতো বোন শামীমা বেগমকে ঢাকা থেকে নেত্রকোণা নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হন এবং পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে নেত্রকোণা শহরের একটি হোটেলে ওঠেন।

২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শফিউল আজম হোটেলে দুজন লোক পাঠায়। ভাড়াটিয়া দুজনের সহায়তায় শামীমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য নেত্রকোনা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে কংস নদীতে ফেলে  দেন চাচাতভাই শামীম। পুলিশের কাছে তিনি এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। গত ৩ মার্চ দুপুর পৌনে ১টার দিকে নেত্রকোণা মডেল থানা পুলিশ নদীতে ভাসমান অবস্থায় একজন নারীর লাশ উদ্ধার করে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার খাইরুল আলম দাবি করেন, বোন শামীমা বেগমকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার দুই ভাই। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদেরকেও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে নেত্রকোণা মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

(ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/কেএম)