ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান সংগ্রামী মুংলী

শামীম কাদির, জয়পুরহাট
| আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২১, ১৫:৩৮ | প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০২১, ১৪:৪৭

ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন সপ্তমী রানী মুংলী নামে এক নারী। তিন সন্তানসহ বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ একাই চালান জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের এই সংগ্রামী নারী।

এলাকাবাসী জানান, শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে বাবার বাড়ি চলে আসে মুংলী। তবে অভাবের সংসারে বোঝা হতে চাননি মুংলী, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে ও তিন সন্তানকে মানুষ করতে শুরুর দিকে পাড়ায় পাড়ায় পান ফেরি করতেন। তবে এতে তার সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরায় মতো অবস্থা। হাল ছেড়ে না দিয়ে একটু বেশি আয়ের জন্য মুংলী ২০১৫ সাল থেকে ভ্যান চালাতে শুরু করেন।

মুংলী জানান, ২০০২ সালে জেলার কালাই উপজেলার বামনগ্রামের কাশীনাথের বেকার ছেলে বিটল মালীর সঙ্গে খুব অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল। তখন চায়না ফোনিক্স বাইসাইকেল, আধা ভরি সোনা, ২০ হাজার টাকা ও ঘর সাজানোর আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছিল তার বাবার বাড়ি থেকে। তবে বিয়ের পর তার সংসারে অভাব যেমন ছিল তেমনি ছিল স্বামীর নির্যাতন।

মুংলী আরও জানান, সংসার কি জিনিস তখন তা ঠিক মত না বুঝতেই বিয়ের পর থেকে শুরু হয় শ্বশুর বাড়ির মানুষের অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মুংলী। একে একে বলতে থাকেন তাকে কিভাবে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নির্যাতন করতেন।

মুংলী বলেন, ‘প্রথমে শ্বশুর আমাকে মারধর করত, তারপর আমার স্বামী বিটল বাবার পক্ষ নিয়ে আমাকে কখনো চড় থাপ্পড়, আবার কখনো লাঠি দিয়ে পেটাত। প্রতিবাদ করলে বা জোরে কাঁদলে মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সিগারেট না হয় জ্বলন্ত মশার কয়েলের স্যাঁকা দিতেন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ি এলেও অভাবী বাবা-মা জোর করে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিতেন। এরপর দিন দিন বাড়তে থাকে নির্যাতন।

মুংলীর মা শেফালী রানী জানান, এভাবে শত নির্যাতন সহ্য করে কখনো শ্বশুর বাড়ি আবার কখনো বাবার বাড়ি আসা যাওয়ার মধ্যেই তিনটি সন্তানের জন্ম দেয় মুংলী। সন্তানদের কথা ভেবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে মুংলীকে স্বামীর বাড়িতে বারবার পাঠানো হলেও সুখী হয়নি সে। নির্যাতনের মাত্রা এত বেড়ে গেল যে, সইতে না পেরে ২০১৩ সালে তিন সন্তানকে নিয়ে একেবারে চলে আসেন হতদরিদ্র বাবার বাড়িতে।

ভ্যান চালাতে আগের চেয়ে অনেক কষ্ট কম হয় জানিয়ে মুংলী বলেন, ‘আগে পা প্যাডেল ঘুড়িয়ে ভ্যান চালাতাম আর এখন ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালাই। প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই, ফিরি বিকালে। সারাদিনের পরিস্থিতিতে হাত-পা তখন প্রচণ্ড ব্যথা করে। দিনে দুই-তিনশ টাকা কামাই করে বাড়ি ফিরি। সেই টাকা দিয়ে সংসারের খরচ চালাই ও তিনটা ছেলে মেয়েকে পড়াশুনা করাই।’

১২ বছরের বড় ছেলে তৃতীয় ও মেঝ মেয়ে সুফলা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। আর সাত বছরের ছোট মেয়ে শংকরীকে মানুষের মত মানুষ করার স্বপ্ন দেখেন মুংলী।

ভ্যানচালক একই এলাকার বামনী গ্রামের ইয়াকুব আলী, পার্শ্ববর্তী নূরনগর গ্রামের মোস্তফাসহ এলাকাবাসী জানান, তারা মুংলীর সব কিছুই জানেন, মুংলীর যাতে একটু বেশি টাকা রোজগার হয় সে জন্য তারা তাকে ২/৪ জন যাত্রী বা বহনের জন্য মালামাল ছাড় দেন।

এ বিষয়ে তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম মাহবুব সেলিম বলেন, মুংলীর বসত বাড়ি নেই, তাই প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আবাসন প্রকল্পের একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য তার নামে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মুংলীদের সৎ উপার্জনে পাশে থাকার জন্য সরকারি-বেসরকারি সংগঠনসহ দাতাদের প্রতি আহ্বান জানান এই জনপ্রতিনিধি।

(ঢাকাটাইমস/৯মার্চ/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :