রহস্যে ঘেরা আমাজন

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২১, ০৮:৪০ | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১, ০৯:২৭

মহিমা আক্তার

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী বিধৌত অঞ্চলের বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত আমাজন অরণ্য বা আমাজন  জঙ্গল। একে চিরহরিৎ বনও বলা হয়। পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত ৭০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত যার মধ্যে ৫৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকাই মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। বিরল-বৃহৎ প্রাণী, অদ্ভুত বৃক্ষরাজিতে পূর্ণ এই জঙ্গল এখনো বিশ্বের অন্যতম রহস্য।

বিভক্তকারী দেশসমূহ:

আমাজন বন ৯টি দেশ জুড়ে বিস্তৃত। যার ৬০% রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩% পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানায়।

প্রাণিজগৎ:

এই জঙ্গলে এত বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যা অন্য কোথাও দেখা যায় না। আমাজনে ৮৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিপজ্জনক অনেক প্রাণীই আমাজনে বসবাস করে। আমাজনে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং ভয়ংকর সাপ অ্যানাকোন্ডা। যা অন্যকোথাও দেখা যায় না।

এছাড়া রয়েছে লাল চোখা ব্যাঙ, বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়, চিতাবাঘ, বানর, বৈদ্যুতিক ইল, মাংস খেকো পিরানহা, বিষাক্ত ডার্ট ফ্রগসহ অসংখ্য বিষাক্ত জাতের সাপ ও বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ প্রাণী।

বৃক্ষ:

আমাজনে প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে যা প্রায় ১৬ হাজার প্রজাতিতে বিভক্ত। হরেক রকমের গাছপালা দিয়ে আবৃত এ বনে বেশির ভাগই চিরহরিৎ বৃক্ষ। তাই এ বনকে চিরহরিৎ বনও বলা হয়। পৃথিবী জুড়ে যেসব রেইনফরেস্ট রয়েছে তার অর্ধেকটাই এ অরণ্য। তাই একে রেইন ফরেস্টও বলা হয়। আমাজনকে রেইনফরেস্ট বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই নয়  যে এখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয় বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত (বর্ষা মৌসুমে) এবং গরম আবহাওয়ার কারণে। প্রচণ্ড গরমের কারণে বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশি যার কারণে আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হয়। 

পৃথিবীর ফুসফুস:

প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য গাছপালার গুরুত্ব অপরিসীম। গাছপালা না থাকলে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকতো না। তাই পৃথিবীতে প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেন প্রয়োজন তার ২০%  আসে এ বন থেকে। এজন্যে আমাজনকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়।

অন্যান্য নদীর উৎস:

আমাজনের নদী বেশির ভাগ নদীর উৎস। বিশ্বে যে পরিমাণ পানি দরকার তার বেশির ভাগই আসে আমাজন নদী থেকে।বিশ্বে পানির চাহিদা মেটাতে আমাজনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমাজন নদীতে তিন হাজার প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী রয়েছে।

উপজাতি:

আমাজন বনে বসবাস করে ৩০০ এর বেশি উপজাতি। এছাড়া ১০ লাখের বেশি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষ আমাজনে বসবাস করে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ব্রাজিলীয়। যারা পর্তুগীজ এবং স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে। এদের নিজস্ব কিছু ভাষাও আছে। এদের মধ্যে কিছু আবার যাযাবরও আছে। এদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে তেমন কোন যোগাযোগ নেই। 

আমাজনের কিছু বিস্ময়কর তথ্য:

# বিশ্বের নিরক্ষীয় বনের অর্ধেকের বেশি অঞ্চল রয়েছে এই আমাজনে।

# প্রাণীকুলের শনাক্তকৃত দশ ভাগের এক ভাগ প্রাণী এ অঞ্চলে বাস করে।

# পৃথিবীর সব পাখির পাঁচ ভাগের এক ভাগ এই বনের অধিবাসী।

# গড়ে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৭৫০০০ ধরনের বৃক্ষ পাওয়া যায়।

# বিশ্বের মোট ওষুধের ২৫ ভাগ কাঁচামাল আসে আমাজনের ৪০০ প্রজাতির গাছ থেকে।

# পেরুর একটি মাত্র গাছে ৪৩ প্রজাতির পিঁপড়ার সন্ধান পাওয়া গেছে।                 

বিপর্যয়:

আমাজনের পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে পরিবেশবিদরা বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিজ্ঞানী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, আমাজন অরণ্য আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে পারে। অপরিকল্পিত বন নিধনের জন্যেই এমনটা হবে বলে ধারণা করা হয়। পেনিসিলভেনিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জেমস এলকক বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য প্রদান করেন। তার মতে জটিল প্রতিক্রিয়া নামক পরিবেশ সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় এমনটা ঘটতে পারে।

ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/এমএ/একে