নেয়ামত ভূঁইয়া’র কবিতা

প্রেম: উত্তাপমুখী উষ্ণতা

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০২১, ২২:০৬ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২১, ২২:৩৭

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

দেহের  উত্তাপ আর হৃদয়ের উষ্ণতা--

এই  দুই মেরুর  টানা-হেঁচড়ায়

হিমাঙ্কে  নেমে যায় আমাদের  দুজনের আবেগের  থার্মোমিটারের  পারদ।

প্রাণ ধারণের জন্যে  চাই  উত্তাপ

প্রেম  ধারনের জন্যে চাই  উষ্ণতা

প্রাণের জন্যে চাই  প্রেম; প্রেমের জন্যে চাই  প্রাণ,

এ দু’য়ের সম্মিলন  ছাড়া  

কোন মিলনের মোহনায় লিখা হবে  প্রেমের উপাখ্যান? 

 

অবশেষে,  চৈতন্যদেবের  কাছে সবিনয়ে  জানতে  চাই;

‘আহ্নিকের পালায় আমাদের  আলো  দেয়  যে  চাঁদ-সূর্য

তাদের মধ্যে  কে  মানুষের বেশি কদর পাবার দাবিদার?’

তিনি বললেন,  ‘ওরা-যে আলো-উত্তাপে 

মাটিকে অমন অন্তরঙ্গ আদরে জড়ায়

তা-কি  কোনো সমাদর বা কদরের আশায়?

মেঘ নিজেকে বিলীন করে  যে-বৃষ্টি ঝরায়

সে কি মাটির  কাছ থেকে  কোনো সমাদর পেতে চায়?’

বীজ  নিজেকে  বিলীন  করে  জন্ম  দেয়  বৃক্ষ তরু লতা;

সে-বীজ কি কদরের মাঝে  খোঁজে কোনো  সার্থকতা?

 

আমরা বললাম, ‘আমাদের এ  প্রশ্ন  প্রতিকী; তাত্ত্বিক  নয়,

সূর্যের উত্তাপ আর চাঁদের আলোর মাঝে কাজ করে যে  সমন্বয়

আসলে সেটাই আমাদের জানবার বিষয়।’

উত্তরে তিনি  কোন  জ্ঞানগর্ভ ভূমিকা না টেনেই

জানাকথার  একটা ফিরিস্তি দিলেন:

‘সূর্য  দিনের রাজা, চাঁদ রাতের  রাণি 

সূর্যের আলো তেজি,  চাঁদের আলো স্নিগ্ধ

সূর্য মাটিকে বুকে জড়ায় প্রাণের  উত্তাপে

চাঁদ  মাটির  মায়ায় বাঁধা পড়ে পুলকের উষ্ণতায়

সূর্য  দিনের জ্বলন্ত সোনালি  দীপক,

চাঁদ  রাতের কপালে রূপালি তিলক।

সূর্যসখার যদি  না পেতো আশীর্বাদ,

আঁধারে বিলীন হতো ভরা পূর্ণিমা চাঁদ।

রবিরাগ  আর  জ্যোৎস্নার  অনুরাগ

উভয়েই  মানুষের  কদরের হকদার।

তবে  সূর্যও  দিনের  আড়াল  হয়

চাঁদও  আড়াল  হয়  দিনের।

নদীর  মতো জোয়ার ভাটা  থাকে চাঁদের আলোর

থাকে  আলো ছায়া আবছায়ার তিথি,

নিজের  শরীরেও আছে কলঙ্কের কালো

কালোর  সঙ্গে এক রহস্যময় ভাব রেখে  চাঁদ তার জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতা ছড়ায়।

সূর্যের  মতো  চাঁদের  আলোতে  নেই  তীব্র দহন

চাঁদ  আঁধারকে  ধাওয়া করে না  দাবদাহের তরোয়াল হাতে।

অভিসারের  আবেগে জ্যোৎস্না-ময়ূর  যেমন পেখম তুলে নাচে

রহস্যের ছায়াকে তেমনি আশকারাও দেয় এই  সূর্যমুখী চাঁদ।’

 

‘সূর্যমুখী চাঁদ’ শব্দ দুটো  আমাদের কানে বাজে;

উত্তাপমুখী  উষ্ণতা  আমাদের  বোধকেও  ছুঁয়ে যায়।

দেহ থেকে  তাপ  নিয়ে  আমরাও  লীন  হই  দেহাতীত  উষ্ণতায়--

আর এমনি করেই দু’মেরুর দ্বন্দ্ব  মিলনে ফুরায়।