অবৈধ দখলে বিলীনের পথে বোকা নদী

প্রকাশ | ১১ মার্চ ২০২১, ১৬:১৪

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় অবৈধ দখলে বিলীন হওয়ার পথে ঐতিহ্যবাহী বোকা নদী। এ নদী দিয়ে নৌপথে আগে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য আদান-প্রদান করতেন। কিন্তু সম্প্রতি এ নদীর চারপাশে দোকানপাট নির্মাণের ফলে নদীটি সরু হয়ে খালে পরিণত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, নদীরপাড় জুড়ে ভরাট ও অবৈধভাবে দোকানপাট ও মার্কেট নির্মাণের ফলে বর্ষায় নতুন পানির স্রোত এলেও তা গতি আটকে বিকল্প গতিতে প্রবাহিত হয়। ফলে নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে নদী তীরবর্তী ঘর-বাড়ি। অন্যদিকে, অবৈধ দখলদারের হাত থেকে নদীর জায়গা উদ্ধার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর উচ্ছেদ অভিযান চালালেও নদীটি উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানান, নানা কারণে দিন দিন নদীটি তার অস্তিত্ব রক্ষার তীব্র সংকটে ভুগছে। নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি নদীর কিছু অংশ পরিণত হয়েছে ময়লার স্তূপে।

জেলার ছাতক উপজেলায় বয়ে যাওয়া সুরমার শাখা বোকা নদীটির জাউয়াবাজারের অবস্থান। এর দৈর্ঘ্য ৩৩ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৩০ ফুটের বেশি। নদীটি জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার মহাসিং নদীর মোহনার সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়েছে। বোকা নদী দিয়ে আগে বড় বড় নৌকা চলাচল করতো। তীরে বাজার হওয়ায় এসব নৌকায় করে ব্যবসায়ীরা চাল,গম, কাঁঠাল এবং বিভিন্ন সবজি আমদানী করতেন। পাশাপাশি বর্ষার সময় নদীর উপর নৌকা বিক্রির হাট বসতো। আর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতা বিক্রেতা এসে বাহারি ধরনের নৌকা ক্রয় বিক্রয় করতেন। ভরা পানিতে অনেক মানুষ লেওয়া জাল, লাঠি জাল বেঁয়ে এবং বর্ষার শেষের দিকে বরশি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মাছও শিকার করতেন। বর্ষায় এ নদীর উপর কয়েকটি নৌকার নোঙ্গর থাকায় আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের যতায়াতের একমাত্র সহজ পথ ছিলো বোকা নদী। এখন তা কল্পনাতীত।

জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে নদীটির পূর্ব দিকে (হাবিদপুর-খিদ্রাকাপন) সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত কুমিল্লা বস্তি ভাঙনের ফলে নদী গর্ভে চলে যায়। সেখানে বসবাস করতেন নিম্নআয়ের প্রায় অর্ধশত পরিবার। তাছাড়া নদী দখল, ভরাট ও মার্কেট নিমার্ণের ফলে নদী ভাঙনে ৪-৫ বছরের মধ্যে নদীর পশ্চিম দিকে (লক্ষমসোম গ্রামের) প্রায় ৪০টি পরিবার জমিসহ ঘরবাড়ি হারিয়ে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। একদিকে মূল নদী সরু হচ্ছে আর অন্যদিকে ভাঙনের মধ্য দিয়ে যেন নদী তার ক্ষোভ ঝাড়ছে। নদীর তীরে বসবাসরত পরিবারগুলোও অজানা আশঙ্কায় দিন পার করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, ‘আগে যার রূপ, যৌবন ছিলো প্রেমে পড়ার মত, এখন তা বিবর্ণ-মলিন। গত কয়েক বছরে নদীভাঙনে নদী তীরবর্তী বাড়ি-ঘর সবকিছু বিলীন হয়ে গেছে। আর নদী দখলে নদীটি এখন খালে পরিণত হচ্ছে।’

দিনমজুর সুজা উদ্দিন বলেন, ‘নদীপাড়ে অবস্থিত বস্তিতে আমরাসহ আরও কয়েকটি পরিবার বাস করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে নদীভাঙনে সবকিছু নদীতে চলে গেছে। এখন ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতে হয়। এতে আর্থিক অনটনে খুবই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।’

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, ‘নদী দখল হওয়া মেনে নেয়া যায়না। দখল হওয়া বোকা নদী উদ্ধারে খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নেব।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়নের বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা জানান, নদীর পাড় অবৈধ দখলদারের কবল থেকে উদ্ধারের জন্য দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নদীর জায়গা অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী খুব দ্রুত নদীর পাড় রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযান করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১১মার্চ/পিএল)