সবহারা হলে সব থাকে
এখন আমার সবি আছে; আমার পুরোটাই আমি,
আমি, সবটাই আমার;
আর কিছু নেই পাবার, দেবার, খোয়াবার।
সীমানাও টুটে গেছে সব আশঙ্কার;
লাভ-ক্ষতির সীমান্তেও বিষাক্ত কাঁটাতার।
কেউ কেড়ে নেবে, সেই ভয়ও নেই আর;
এদ্দিন বিপদকে তাড়াতে না তাড়াতেই
বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো নেমে আসতো আপদের শনি;
এখন ওইসব রাহুগ্রহের প্রভাবে পড়েছে মন্ত্রের বন্ধনী।
তাড়া খেয়ে ঝড়ো হাওয়ায়
ঝ’রে ঝ’রে সারাটা রাত বৃষ্টি ধারায়
বুকের পাঁজরে পাঁজর ঘষে আগুন জ্বেলে
বাদলা রাতকে বিজলি আলো বিলিয়ে দিয়ে
যেমন করে মেঘেদের শরীর ভোর না হতেই সর্বহারা-
আমিও আমার গাঁটের পুঁজি, ধানী জমি, মাঠের ফসল
পারের কড়ি, বলদ জোড়া, লাঙ্গল জোয়াল,
সাধের একতারা, পানের বাটা, নলের হুঁকো
সব বিলিয়ে এক্কেবারে হাত-পা ঝাড়া।
দেবার সব পাত্রের ভিটায় এখন ঘুঘু চড়ে
উইপোকাদের আসর জমেছে চালের খড়ে
চুলোর ছাইয়ে বেড়ালের আরামের ঘুম
বাহ! হাহাকারে ভরা কী আত্মনির্ভরতার ওম!
তাই এখন আমার সবই আছে।
হারাবার মতো আর কিছু নেই আমার কাছে
তাই বাড়তি সাবধানতার ক্লেশ নেই
উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অস্বস্তি সবি হাওয়া।
নিজের নদীতে এখন নিজের মনপবনের নাও বাওয়া
ইচ্ছে হলে নিজের খেয়ালি ঘাটে নাও বাঁধা,
একই বৃত্তে হাসা-কাঁদা, মরমের সুর সাধা।
জানতাম না তো, জীবন হতে পারে অতোটাই সিধে-সাদা!
খামতি থাকলে চাইবার আকুতি থাকে
তেমন কিচ্ছু নেই আমার ভাণ্ডারে।
দস্যু কিংবা দানবকিছুই আর নিতে পারবে না কেড়ে।
লুণ্ঠিত হয়ে কুণ্ঠিত হবার ভীতি থেকে মিলেছে মুক্তি।
‘যেমন খুশি তেমন সাজো’র অধিকার
আহা! আগে যদি জানতাম
জীবন হতে পারে এতোটা নির্ভার!
তখনি মাল্লা সেজে পৌঁছে যেতাম সাত সমুদুর তেরো নদীর পার;
বাউন্ডুলে বালকের মতো বর্ষার থৈথৈ জলে কী মজার ডুবসাঁতার!
সবহারা হলে সব থাকে; এখন কিছু নেই আমার কাছে,
আছে কেবল আমার আমি। তাই,এখন আমার সব আছে।