গফরগাঁওয়ে কেঁচো সার উৎপাদনে আবুল হাসেমের সাফল্য

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০২১, ১৬:৩৬

মানুষের রোগজ্বালা ক্রমে বাড়ছে। এর একটা কারণ হলো দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসব খাবার খাচ্ছি, তার চাষে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। অজান্তেই এসব রাসায়নিক শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। তার প্রভাবে কিডনি বিকল হওয়া থেকে শুরু করে ক্যানসারের মতো দূরারোগ্য ব্যাধিও হচ্ছে।

এই সমস্যার সহজ সমাধান হলো জৈব পদ্ধতিতে বানানো কেঁচো সারের ব্যবহার বাড়ানো। তাহলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব কৃষিব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এতে চাষের খরচের পাশাপাশি স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকিও কমে যাবে।

আশার কথা, রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে জৈব সার, বিশেষ করে কেঁচো সার ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা পেয়েছেন।

এ ক্ষেত্রে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার টাঙ্গাব ইউনিয়নের টাঙ্গাব গ্রামের বাসিন্দা সাবেক মেম্বার আবুল হাসেম অনুসরণীয় ভূমিকা রাখছেন। তিনি নিজে কেঁচো সার ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রি করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি ২০১৭ সালে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেছিলেন সিমেন্টের তৈরি ২০টি চারি দিয়ে, এখন ২০৮টি চারি। সব মিলিয়ে তিনি বাড়িতেই এই সার উৎপাদনের মিনি ‘কারখানা’ গড়ে তুলেছেন।

এখান থেকে তিনি প্রতি মাসে প্রায় তিন টন কেঁচো সার উৎপাদন করতে পারেন। প্রতি টন বিক্রি হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে তিনি প্রতি মাসে ৪২ থেকে ৪৫ হাজার টাকার সার বিক্রি করেন। খরচ বাদে বছরে আয় করছেন অন্তত সাড়ে তিন লাখ টাকা। এখন পুরোদস্তর স্বাবলম্বী আবুল হাসেম। কেঁচো সার উৎপাদন শুরুর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। এই উদ্যোগ আবুল হোসেনের জীবনে অভাবনীয় সাফল্য এনেছে দিয়েছে।

বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনের একটি শেড ঘরে কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন। ওই শেড ঘরেই সিমেন্টের তৈরি ২০৮টি চারি।

আবুল হাসেম বলেন, গোবর, চা পাতা, কচুরিপানা লতা-পাতা ও ডিমের খোসা, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ও কলাগাছ টুকরা টুকরা করে কেটে মেশানো হয়। সেগুলো চারিতে ভাগ করে রাখা হয়। প্রতিটিতে ছেড়ে দেয়া হয় অন্তত এক হাজার কেঁচো। চটের বস্তা দিয়ে চারি ঢেকে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়ায় কেঁচো সার উৎপাদন হতে দুই মাস সময় লাগে।

তিনি জানান, এই সার ব্যবহার করে তিনি তার মেহগণি গাছের বাগান ও এক একর ১৪ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করছেন।

এছাড়াও গরুর গোবর কেঁচো সারের জন্য সর্বত্তম। কেঁচোর খাবারের জন্য গরুর গোবরেই সিংহভাগ দেয়া হয়। নিজস্ব গরুর খামার না থাকায় গোবর সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট হয় এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করে গোবর সংগ্রহ করতে হয় তাকে। এ অবস্থায় সরকার যদি তাকে ঋণ দেয় তাহলে একটি গরুর খামার গড়ে তুলতে পারবেন। সেখান থেকে কম্পোস্ট সারের জন্য প্রচুর সংগ্রহ করা সম্ভব হতো। তাই তিনি সরকারের কাছে গরুর খামার গড়ে তুলতে ঋণ আশা করেন।

গফরগাঁও উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, টাঙ্গাব গ্রামের কৃষক আবুল হাসেম কেঁচো সারের উদ্যোক্তা। বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ভার্মি কম্পোস্টে বিশেষ অবদান রাখছেন তিনি। আবুল হাসেমকে দেখে এখন উপজেলার অকেকেই কেঁচো চাষ করছেন। স্বাবলম্বী হওয়ার লড়াইয়ে সাফল্য পেয়েছেন তাঁরাও।

(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :