আসছেন মোদি, শ্যামনগরে চলছে ব্যাপক তৎপরতা

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০২১, ১৬:৫১

বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির সংস্কার থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আগামী ২৭ মার্চ তিনি এখানে আসবেন। সফরটি খুবই সংক্ষিপ্ত হলেও আয়োজনে কোনো ঘাটতি রাখছেনা জেলা প্রশাসন। এমনকি তার বিশ্রামের বিষয়টিও মাথায় রেখে স্থানীয় ভূমি অফিসকেও সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে।

ভারতের পশ্চিম বাংলার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ সফর অনেক তাৎপর্যপূর্ণ হলেও তিনি বাংলার সর্ব দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সফরকে বেঁছে নিয়েছেন একটি ধর্মীয় অনুভূতি থেকে। ইতোমধ্যে সেখানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার রাজেশ কুমার রায়না, জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় সাড়ে ৪০০ বছরের পুরান যশোরেশ্বরী কালীমন্দির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস রযেছে। ১৫৬০ থেকে ১৫৮০ সাল পর্যন্ত রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালে তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ঈশ্বরীপুর এলাকায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটি নির্মাণের পর সেটি বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে মন্দিরটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ওঠে। সে সময় শ্যামনগরের ধুমঘাট ছিল বাংলার ১২ ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী। রাজা প্রতাপাদিত্য এসময় দেখতে পান, ওই জঙ্গল থেকে এক আলোকরশ্মি বেরিয়ে আসছে। তিনি তখন মন্দিরটি খোলার নির্দেশ দেন। মন্দিরটি খুলেই সেখানে দেখা মেলে চন্ডভৈরবের আবক্ষ শিলামূর্তি। তখন থেকে সেখানে পূজা-অর্চনা শুরু হয়।

ইতিহাসের তথ্য মতে, দক্ষ রাজার কনিষ্ঠ কন্যার নাম ছিল সতীবালা। তিনি জন্ম থেকে মহাদেবের পূজারিণী ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি স্বেচ্ছায় মহাদেবকে বিবাহ করেন। এতে দক্ষ রাজার ঘোর আপত্তি ছিল। এক অনুষ্ঠানে দক্ষ রাজার উপস্থিতিতে মহাদেব আসেন। কিন্তু মহাদেব রাজাকে তার শ্বশুর বলে পরিচয় দেননি। এতে তিনি চরম অপমানবোধ করেন। পরে শুরু করেন দক্ষযজ্ঞ। এতে সতীবালা ও মহাদেব নিমন্ত্রিত ছিলেন না। এতে অপমানবোধ করেন সতীবালা। কিছুক্ষণ পরেই সতীবালা দেহত্যাগ করেন।

এ খবর পেয়ে কৈলাস থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসেন মহাদেব। তিনি দক্ষ রাজার মুণ্ডু কেটে বলির জন্য নিয়ে আসা ছাগলের মুণ্ডু কেটে সেখানে বসিয়ে দিয়ে দক্ষযজ্ঞ লণ্ডভণ্ড করে দেন। পরে তিনি মৃত স্ত্রী সতীবালাকে কাঁধে নিয়ে কৈলাস পাহাড়ে চলে গিয়ে ক্ষোভে ও দুঃখে ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। এ খবর পেয়ে ব্রহ্ম ও নারায়ণ সিদ্ধান্ত নিলেন মহাদেবকে ঠাণ্ডা করতে হলে তার কাছ থেকে সতীবালার মৃতদেহ সরিয়ে নিতে হবে। সে অনুযায়ী ত্রিশূল দিয়ে সতীবালাকে ৫১ খণ্ড করে ত্রিশূলে ঘোরানো হয়। এর একখণ্ড এসে পড়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে। সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। অপর খণ্ডগুলো পশ্চিমবঙ্গের কালীঘাট, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী জানান, প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ মন্দিরে পূজা অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। এ দু’দিন পূজা উপলক্ষে শত শত ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শনিবার আসছেন।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার বিষয়টি এসএসএফ এর তত্বাবধানে মূলত পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মহিদ উদ্দীন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। গত ১ মার্চ থেকে মন্দিরসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশী নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে। চেকপোস্ট তৈরি করে সাধারণের চলাচলের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় হোটেল, ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, নরেন্দ্র মোদির সফর নির্বিঘ্ন করতে, সকল বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কয়েক দফা শ্যামনগর পরিদর্শন করেছেন। যেহেতু এটি রাষ্ট্রীয় সফর, তার মর‌্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে কোনো কিছুই কমতি রাখা হবেনা। এছাড়াও নরেন্দ্র মোদির সামনে বাংলাদেশ তথা সাতক্ষীরার ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরতে জেলা প্রশাসন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট, হেলিপ্যাড নির্মাণসহ সব ধরনের কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। তার সফরের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা সজাগ থাকবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/পিএল)