প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

ত্রিশাল(ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২১, ১৮:৩১

ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী কার্ডে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের বুলু মিয়া নামে এই ইউপি সদস্যের (মেম্বার) বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ত্রিশালের মঠবাড়ী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বুলু মিয়া এক প্রতিবন্ধী নারীর ভাতার কার্ডের জন্য হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা।

ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী নারী রাবিয়া (২৭) জানান, প্রতিবন্ধী ভাতা পাবার জন্য তার ওয়ার্ডের মেম্বার বুলু মিয়া তার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। পরে তিনি বাধ্য হয়ে ৫ হাজার টাকা দিলে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করে দেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো জানান, সরকারের দেয়া এই সহযোগিতা তিনি প্রতিবন্ধী থাকা সত্ত্বেও সঠিক নিয়মে পাননি এই জনপ্রতিনিধির দুর্নীতির জন্য।

তিনি শুধু আমার টাকাই আত্মসাত করেননি, আমাদের গ্রামের আরো অনেকের সাথে তিনি এমন প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। যত্ন প্রকল্পেও তিনি সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হতদরিদ্র ফজলুল হকের স্ত্রী আকলিমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, যত্ন প্রকল্পে গর্ভবতী মায়ের জন্য কার্ড করে দেয়ার নাম করে প্রায় ১ বছর আগে আমার কাছ থেকে ১৫০০ টাকা নিয়েছিল বুলু মেম্বার। কার্ড হইলে আরও ৫০০ টাকা দেয়ার কথা ছিল। কার্ড না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে সে আমাদের পুরা টাকা ফেরত দেয়নি। প্রায় ১৫ দিন তার বাড়িতে দেখা করে শেষে ১০০০ টাকা পেয়েছিলাম। ৫০০ টাকা আর দেয়নি।

তিনি আক্ষেপের সুরে আরও বলেন, সরকার সহায়তা করছে গরিবের জন্য। আসলে গরিব লোকেরা কিছু পায় না, পায় ধনীরা। মুখ চিইনা চিইনা তাদের দেয়। আমাদের গরিবের যতটুকু দয়া করে- শুধু আল্লাহই করেন।

স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, এ ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিক কার্ড বিতরণে নয়-ছয় হয়েছে। ইউপি সদস্য বুলু মিয়া কার্ড বিক্রি করেছে। যে বেশি টাকা দেয়, সেই কার্ড পায়। এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঠিক তদন্ত করলেই সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি (মেম্বার) সদস্য বুলু মিয়া তার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী মহিলার অভিযোগসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র হতে পারে। এটা সম্ভবত খোকা মিয়ার (ইউপি সদস্য) কাজ। খোকা মিয়া চেয়ারম্যানের লোক হওয়ায় টাকার বিনিময়ে অনেক লোককে কার্ড করে দিচ্ছে। সে সমাজসেবা অফিসে যারা কাজ করে তাদের নাম করে টাকা নিচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে তার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো নেই। তাই হয়তো সে আমার বিরুদ্ধে রাবিয়াকে দিয়ে এমন অভিযোগ আনিয়েছে। এ বিষয় নিয়ে খোকা মিয়ার সাথে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুস মণ্ডল এ ব্যাপারে বলেন, আমার কাছে কখনো কেউ এমন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। সে যদি টাকা নিয়ে থাকে, তবে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হবে। আর খোকা মিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার লোক তো ইউনিয়নের সবাই।

ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে ইউপি সদস্যের টাকা নেওয়ার অভিযোগ কোনো ব্যক্তি আমাদের জানায়নি। এমন যদি হয় তবে তা অনিয়ম। আর আমাদের অফিসের কেউ যদি টাকা নিয়ে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, আমি এই বিষয়ে আগে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :