বৃষ্টির ছোঁয়ায় নতুন কুঁড়ি এসেছে চা-বাগানে

প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০২১, ১৬:২৩

রমজান আলী, মৌলভীবাজার (কমলগঞ্জ)

চলতি বছরের আগাম বৃষ্টির ছোঁয়ায় চা-বাগানগুলোতে এসেছে নতুন কুঁড়ি। এতে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ২২টিসহ জেলার সবকটি চা-বাগান। আগাম বৃষ্টি হওয়ায় চেলায় চায়ের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
চা-শ্রমিকেরা দ্রুত কাটিং (ছাঁটাই) কাজ করায় আগাম বৃষ্টি উপকারী হয়েছে চা-বাগানগুলোর জন্য। গত সপ্তাহে ৩-৪ দিন ধরে বৃষ্টিপাত হয়। ফলে এ বৃষ্টি উপযুক্ত সময়ে হওয়ায় চা-গাছে আগেভাগেই গজাচ্ছে নতুন কুঁড়ি। এই বৃষ্টি রবিশস্যের জন্য কিছুটা ক্ষতির কারণ হলেও চা-বাগানের জন্য তা খুবই প্রয়োজনীয়।

জানা গেছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস থেকেই প্রতিটি চা-বাগানে করা হয়েছিল ছাঁটাইয়ের (কাটিং) কাজ। টানা চার মাস পর এখন মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাতের ফলে কাটিং করা গাছে কুঁড়ি গজাতে শুরু করেছে। আর চা-পাতার কুঁড়ি আগে গজানোয় আগে পাতা তোলা শুরু হবে।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামছুল ইসলাম সেলিম জানান, চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রধানত যে জিনিসটির প্রয়োজন তা হলো বৃষ্টি। সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় কাটিং করা গাছগুলো বৃষ্টির পানি পেয়ে আগে-ভাগে কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করে। এতে এ বছর চায়ের উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ চা-বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশের ১৬৬টি চা-বাগানে আট কোটি ২১ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন। ওই বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাত কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৯ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়। এর আগে ২০১৬ সালে ১৫০ বছরের চায়ের ইতিহাসে প্রথম সর্বোচ্চ আট কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। তখন বছরজুড়ে চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় ছিল। তবে এই উৎপাদনের ধারা ধরে রাখতে না পারায় ২০১৭ সালে চা উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছিল সাত কোটি ৮৯ লাখ কেজিতে। গত তিন বছর চায়ের গড় উৎপাদন ছিল ৮ কোটি ২০ লাখ কেজি। বর্তমানে দেশে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। ২০১২ সালে হয়েছিল ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে।

বিশ্বে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন নবম স্থানে অবস্থান করছে। ২০১৭ সালে ছিল দশম স্থানে। আর ২০১৫ সালে ছিল ১২তম স্থানে। ২০২০ সালে চায়ের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫ দশমিক নয় মিলিয়ন কেজি। করোনার প্রতিকূলতার মাঝেও উৎপাদন দাঁড়ায় ৮৬ দশমিক তিন মিলিয়ন কেজিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ মিলিয়ন কেজির বেশি। তবে এ উৎপাদন ২০১৯ সালের উৎপাদন থেকে নয় দশমিক ৬৮ মিলিয়ন কেজি কম। এবার চলতি মৌসুম ২০২১ সালের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭  দশমিক ৭৮ মিলিয়ন কেজি।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির মাধবপুর চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক ইউসুফ খাঁন বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে চা-বাগান প্লান্টেশন এলাকায় পাইপ লাইনে ইরিগেশনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে থাকি। এতে খরচ বেড়ে গেলেও চা-গাছ ঠিক রাখতে এ ব্যয় বহন করতে হয়। আগাম বৃষ্টির ফলে এ বছর চায়ের উৎপাদন আরও ভাল হবে।’

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানান, আগাম বৃষ্টি চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজে আসবে। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত, অনুকূল আবহাওয়া, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ও খরার কবলে না পড়লে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার অধিক চা-পাতা উৎপাদন করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/পিএল)