ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষা শিখে ভয়ঙ্কর প্রতারণা!

প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০২১, ২০:৫৭ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২১, ২১:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চাকরির প্রলোভন, সরকারি দপ্তরে তদবির, বিদেশি প্রজেক্ট দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে হাতিয়েছেন শত কোটি টাকা। তার প্রতারণায় সর্বশান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। পঞ্চম শ্রেণি হলেও কোরিয়ান ও ইংরেজি ভাষা জানা এই ব্যক্তির নাম এস এম শামসুদ্দোহা চৌধুরী বিপ্লব। পরবর্তীতে নিজের নাম রাখেন লি সান হো। তবে প্রতারণার জন্য কখনও নেহাল চৌধুরী, কখনো আদিল আবার কখনো কায়সার বা দোহাসহ বিভিন্ন নামে পরিচয় দিতেন। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর শাহআলী থানার মিরপুর-১ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪ এর একটি দল।

বুধবার ভয়ংকর এই প্রতারকের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

র‌্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, এস এম শামসুদ্দোহা চৌধুরী বিপ্লব নিজেকে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিতেন। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

অর্থ আত্মসাৎ এবং ব্যাংকের চেক জালিয়াতির কারণে ৮ বার জেলে যান এই প্রতারক দোহা। ৩৮ মামলার আসামি ও তিন মামলার পরোয়ানাভুক্ত দোহা রাজধানীর বারিধারাতে থাকতেন।

র‌্যাব জানায়, এস এম শামসুদ্দোহা চৌধুরী বিপ্লব ওরফে দোহার জন্ম পাবনা জেলার চাটমোহর ফৈলজানা গ্রামে। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করা দোহা দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রমিক হিসাবে পাড়ি দেয়। বিবিএ পাশ বলে প্রচার করলেও ঘোরেন ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে। ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষা বেশ ভালোভাবে রপ্ত করে নিজের নাম রেখে দেন লি সান হো। কোরিয়ানদের সঙ্গে প্রতারণা করে বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন কোরিয়ানদের ট্যুর গাইড হিসাবে কাজ করেন। এ সুযোগে তিনি বারিধারা ডিওএইচএস এলাকায় নাম সর্বস্ব WAO খুলে চাকরির প্রলোভন, সরকারি দপ্তরে তদবির, বিদেশি প্রজেক্ট দেখিয়ে শুরু করেন প্রতারণা। অন্যের জমি, খাস জমি দখল করে নিজের নামে ভুয়া দলিল তৈরি করে তা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার মালিকানাধীন ডব্লিওসিও, ডব্লিওএও, সোলার প্যানেল লিমিটেড ও এঞ্জেল সার্ভিস লিমিটেড নামে চার প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে।

প্রতারক দোহা চক্রের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থাকেন। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজধানীর সরকারি, বেসরকারি, অবসারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং ধনাঢ্য ব্যক্তির সুসম্পর্ক স্থাপন করে বড় বড় প্রজেক্টে কাজ দেয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া।

নতুন নতুন ভুয়া প্রজেক্টের নাম ব্যবহার করে প্রজেক্টে শেয়ার দেয়ার নামে ধনী ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাদের কষ্টার্জিত অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন তারা।

এছাড়াও নারীদের সঙ্গে অশ্লীল ছবি-ভিডিও তুলে প্রতারণা করতেন দোহার তিন স্ত্রী। ঘরে তিন তিনটি বউ থাকা সত্ত্বেও তিনি কম বয়সী ছাত্রী, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের নিজেই প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। এরপর শারিরীক সম্পর্ক গড়ে ভিডিও করে রাখতেন। পরে তাদের দিয়েই ব্লাকমেইল করে ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গে রাত্রিযাপনের সুযোগ করে দিয়ে বড় বড় কাজ হাতিয়ে নিতেন। আবার প্রয়োজনে ভুক্তভোগীদের দমাতে করতেন ব্লাকমেইল। দোহা এঞ্জেল সার্ভিসে নারীদেরকে কাজ করতে বাধ্য করতেন।

র‌্যাব আরও জানায়, শামসুদ্দোহা চৌধুরী  সরকারি বেসরকারি বড় বড় প্রজেক্ট পাওয়ার জন্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন অফিস এবং প্রতিষ্ঠানে লিঁয়াজো মেইনটেইন করতেন।

প্রতারণায় হাতিয়েছেন বিদেশি প্রজেকক্ট:

দোহার কোম্পানির নাম কখনো WAO, কখনও পাওয়ার প্ল্যান্ট সার্ভিস বলে প্রচার করতেন। এই প্রতারণাকে কাজে লাগিয়ে দোহা সম্প্রতি বিদেশি কোম্পানির একটি প্রজেক্টও হাতিয়ে নিয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ বিভিন্ন মামলার ৩৮টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রতারণা সংক্রান্ত অসংখ্য জিডি ও অভিযোগ রয়েছে।

দোহার মাধ্যমে যেভাবে প্রতারিত হয়েছেন মানুষ:

দোহার প্রতারণার শিকার জুরাইন এলাকার ভুক্তভোগী ইট, বালু, পাথর ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, আমার বন্ধুর মাধ্যমে দোহার সঙ্গে পরিচয়। সর্বপ্রথম আমি তাকে পাথর সাপ্লাই করি। পাথরের বিলের জন্য গেলে সে আমাকে ৩১ লাখ টাকার চেক দেয়। সেই চেক পাস হয়নি। সে আমাকে আরো কয়েকশো কোটি টাকার একাধিক প্রজেক্ট দেখায়।

তিনি বলেন, রড সিমেন্ট বালু পাথরসহ বিভিন্ন সময় নগদ টাকা দিয়েছি। সব মিলে এক কোটি ৯১ লাখ টাকার চেক পেয়েছি। আমি শামসুদ্দোহা চৌধুরী বিপ্লবের বিরুদ্ধে এক কোটি ৬০ লাখ টাকার মামলা করেছি। যখন টাকা ফেরত চাইতাম তখন সে রেডিসনে ডেকে নারীদের ব্যবহার করতে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল। বুঝতে পেরে পালিয়ে আসি।

আরেক ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত এক ব্রি. জেনারেল। তার কাছ থেকে দোহা হাতিয়ে নেন ৮৫ লাখ টাকা। এ ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করে বলেন, স্ত্রীর বান্ধবির পরিচিত দোহা। সেই সুবাদে প্লট কেনার প্রস্তাব আসে। জমি কিনতে গিয়ে এক রকম বিশ্বাস করে ৮৫ লাখ টাকা ক্যাশ দিই। ৭ বছর ঘুরে সেই জমি পাইনি। পরে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে বুঝতে পারি ভুয়া দলিল দেখিয়ে প্রতারণা করেছে। সিটি ব্যাংকের চেক দেয়। যে চেকে ওই ৮৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/এ্সএস/ইএস