৩০০ কোটি টাকার আগর-আতর অবিক্রীত

ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা ব্যবসায়ীদের

প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০২১, ১৬:৫৪ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১, ১৭:২৫

আশফাক জুনেদ, বড়লেখা (মৌলভীবাজার)

আগর-আতরের রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের বড়লেখার সুজানগর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে ছোট বড় নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০টির বেশি আগর- আতরের কারখানা রয়েছে। আর এসব কারখানায় কয়েক হাজার  শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। বিশ্বের সবচেয়ে দামি আতর তৈরি হয় সুজানগরে। তাই সুজানগরে খ্যাতি জগৎজুড়ে।

প্রতি বছর শত কোটি টাকার আগর-আতর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে গত বছর থেকে আগর-আতর রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন আগর শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা। করোনায় প্রায় তিন শত কোটি টাকার পণ্য রয়ে গেছে, যেগুলো বিক্রি হয়নি।

এদিকে করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় গত দুই তিন মাস থেকে সীমিত হারে কিছু ব্যবসায়ী আগর-আতর রপ্তানি শুরু করেছেন। কিছুটা হলেও করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন কারখানা মালিকেরা। তবে অনেকেই আগর-আতর রপ্তানির জন্য সরকারি সাইতিস সার্টিফিকেট পেতে বিলম্ব হওয়ায় উৎপাদিত আগর-আতর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা সরকারের কাছে এই সাইতিস সার্টিফিকেট তুলে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

আমেনা অ্যান্ড ফাতেমা আগর উড অ্যান্ড পারফিউমের পরিচালক আদিব মজিদ বলেন, করোনার প্রকোপ কিছুটা কাটিয়ে উঠার পর সীমিত পরিসরে আগর-আতর রপ্তানি করেছি। তবে আগের মতো নয়। বিমানের ফ্লাইট স্বাভাবিক হলে আগের মতো রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

সুজানগর পারফিউমের মালিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, করোনায় আমার প্রায় দুই কোটি টাকার পণ্য অবিক্রীত রয়েছে। করোনার দকল কিছুটা কমায় এবার চেষ্টা করছি কিছু পণ্য রপ্তানি করবো। প্রায় ৬০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করছি। সাইতিস সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি শিগগিরই পেয়ে যাবো। সার্টিফিকেট পেলেই পণ্য রপ্তানি করতে পারবো।

তিনি বলেন, করোনার আগে আমার কারখানায় প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করতেন। করোনায় রপ্তানি কমে যাওয়ায় উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে শ্রমিক সংখ্যাও কমে গেছে। এখন ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তিনি সরকারের কাছে রপ্তানি করার জন্য সাইতিস সার্টিফিকেট তুলে নেয়ার অনুরোধ জানান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুজানগর ইউনিয়নের সালদিঘা, রফিনগর, হাসিমপুর, চিন্তাপুর, বড়থল গ্রামসহ ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে কম-বেশি এবং পাথারিয়ার পাহাড়ি এলাকায় সবচেয়ে বেশি আগর চাষ হয়। চাষ শেষে কারখানায় উৎপাদিত আগর-আতর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।

বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ওমান, ইয়েমেনসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে আগর-আতর রপ্তানি হয়। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন আগর আতর রপ্তানি বন্ধ রয়েছে ফলে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।

 

দেশে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় সীমিত পরিসরে কিছু ব্যবসায়ী আগর আতর রপ্তানি শুরু করেছেন। অনেকে ইতিমধ্যে রপ্তানির জন্য সাইতিস সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছেন। সাইতিস সার্টিফিকেট পেতে বিলম্ব হওয়ায় অনেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করতে না পেরে কারখানায় আটকে আছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আগর আতর অবিক্রীত রয়েছে। করোনার কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় আগর আতর রপ্তানি করা যায়নি। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় আর সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালু হওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী আগর-আতর রপ্তানি করছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকার আগর-আতর রপ্তানি করা হয়েছে। রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় করোনাকালের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। ফ্লাইট চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে অবিক্রীত পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনসারুল হক বলেন, করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় কিছু ব্যবসায়ী বিদেশে আগর-আতর রপ্তানি শুরু করেছেন। করোনাকালে দীর্ঘদিন রপ্তানি বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে ধীরে ধীরে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিদেশে আগর আতর রপ্তানি করতে প্রয়োজনীয় সাইতিস সার্টিফিকেটটি পেতে অনেক সময় বিলম্ব হয়। এটি অনলাইনের মাধ্যমে সংগ্রহের সুযোগ করে দিলে ব্যবসায়ীদের উপকার হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/কেএম)