তুতুনের জাদুর পেন্সিল

আব্দুর রহমান
| আপডেট : ২১ মার্চ ২০২১, ১২:১১ | প্রকাশিত : ২১ মার্চ ২০২১, ১২:০৩

পরিবারে সবচেয়ে ছোট হওয়ায় তুতুন সকলের খুব আদরের। সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। তার বাবা তাকে ‘তুতুন সোনা’ বলে ডাকে। গত বছরের জানুয়ারিতে সে প্রথম স্কুলে পা রাখে। ভর্তি হয় ঢাকার একটি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে নার্সারিতে। স্কুলে ভর্তি হয়ে তুতুন তো মহাখুশি। কিছুদিন না যেতেই তার অনেক বন্ধু হয়ে যায়। এই প্রথম সে এত বন্ধু পেয়েছিল। স্কুলে ভর্তির আগে বাবা-মা আর দিদি ছাড়া তার কোনো বন্ধু ছিল না। তাই সে মনের আনন্দে প্রতিদিন স্কুলে যায়। একদিনও স্কুল কামাই করে না।

তুতুন প্রায়ই বন্ধুদের জন্য বাসা থেকে খাবার নিয়ে যেত এবং টিফিন পিরিয়ডে সবাই একসঙ্গে মজা করে খেতো। বন্ধুরাও তার জন্য খাবার নিয়ে আসতো। এভাবে আনন্দের সঙ্গে বেশ ভালোই যাচ্ছিলো তুতুনের দিন। কিন্তু একদিন কিছু না বলেই স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে দিল। তুতুন পরে তার দিদির কাছ থেকে জানতে পারলো, কী যেন একটা অসুখের জন্য স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। বড় বোন তাকে বলেছে, ‘তুতুন সোনা, এখন থেকে সবসময় সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। তা না হলে তোমাকে করোনায় ধরে ফেলবে’। তুতুন কিছু না বুঝে দিদির দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। আবারও সে আগের মত ঘরের কোণে বন্দী হয়ে পড়ল। এভাবেই তুতুনের দিন কাটতে লাগলো।

অনেকদিন পর তুতুন আজ ভীষণ খুশি। তার বাবা আজ তাকে খুব সুন্দর একটি পেন্সিল উপহার দিয়েছেন। পেন্সিলটি তার খুব পছন্দ হয়েছে। পছন্দ হবে নাই বা কেন, এই পেন্সিলটি আর পাঁচটি পেন্সিলের মত নয়। একটু অন্যরকম। দেখলেই মনে হয় যেন রূপকথার কোনো জাদুর কাঠি। তাই সবসময়ই সে পেন্সিলটি তার সঙ্গে রাখে। হোক খাবার সময় বা ঘুমানোর সময়। সে একবারের জন্যও পেন্সিলটি হাতছাড়া করে না।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তুতুন পড়তে বসে। কিন্তু আজ তার পড়াশোনা করতে মন চাচ্ছে না। তাই তার দিদি তাকে ছবি আঁকতে বলল। এমনিতেই তার পেন্সিলটির প্রতি আগ্রহের কমতি ছিল না। তাই দিদির কথা মত সে তার পেন্সিলটি দিয়ে আঁকতে বসে পড়ল। কিন্তু সে কী আঁকাবে বুঝতে পারছিল না। অনেক চিন্তা ভাবনার পর সে তার পেন্সিলটিকেই আঁকতে শুরু করল। কিন্তু এ কী অবাক কান্ড! সে পেন্সিল আঁকা মাত্রই সেটি বাস্তবে রূপ নিল। সত্যি সত্যিই তার আঁকা পেন্সিলটি বাস্তব পেন্সিলে পরিণত হলো।

তুতুনের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, তার বাবার দেওয়া পেন্সিলটি সত্যিকার অর্থেই একটি জাদুর পেন্সিল। সে খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। সে পেন্সিলটি নিয়ে দৌঁড়ে গেল তার দিদির কাছে এবং আনন্দের সঙ্গে লাফাতে লাফাতে সব খুলে বলল দিদিকে। তুতুনের কথা শুনে দিদি তাকে আরও উৎসাহ দিল এবং বেশি বেশি ছবি আঁকতে বলল। এরপর একে একে তুতুন বাসার সবার কাছে পেন্সিলের কথা বলতে লাগল। তার আনন্দ দেখে বাসার সকলেই খুব খুশি।

তুতুন এখন রূপকথার রাজকুমার। তার কাছে রয়েছে জাদুর পেন্সিল। সে এখন যা ইচ্ছা তাই পেতে পারে এই পেন্সিল দিয়ে। সে শুধু আঁকবে আর সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবে পরিণত হবে। সে মনে মনে এগুলোই ভাবতে থাকে সারাদিন। সে পেন্সিল দিয়ে তার পছন্দের একটি খেলনার ছবি আঁকালো এবং সঙ্গে সঙ্গেই তা সত্যিকারের খেলনায় পরিণত হলো। তার আনন্দ আর দেখে কে। সে তাইরে নাইরে করে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতে লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো, স্কুল খুললে বন্ধুদেরকে সে তার এই জাদুর পেন্সিলটি দেখাবে এবং তারা যা চাইবে তাই সে এঁকে এনে দেবে।

এই ভেবে তুতুন আরও খুশি হয়ে গেল। সে অপেক্ষা করতে লাগলো কবে স্কুল খুলবে আর কবে সে তার বন্ধুদেরকে এই জাদুর পেন্সিলটি দেখাবে। সে প্রতিদিন তার দিদিকে স্কুল খোলার কথা জিজ্ঞেস করে। কবে খুলবে স্কুল? তার দিদিও কিছু বলে না। শুধু বলে, ‘সব ঠিক হয়ে গেলেই খুলবে স্কুল’। তুতুন ভাবে, কী ঠিক হবে? কবে ঠিক হবে? স্কুলের আবার কী হয়েছে? স্কুলেরও কি মানুষের মত জ্বর হয়? আরও ভাবে, সে তার জাদুর পেন্সিল দিয়ে স্কুলের জ্বর ভালো করে দেবে। তখন আর স্কুল বন্ধ করবে না। সে আবার প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারবে। আবার বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন খেতে পারবে। বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলতে পারবে।

হঠাৎ তুতুনের কান্নায় সকলের ঘুম ভেঙে যায়। কী হয়েছে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। এদিকে তুতুনের কান্নাও থামে না। কান্নার ফাঁকে ফাঁকে সে বলতে থাকে, আমার জাদুর পেন্সিল, আমার জাদুর পেন্সিল। সে দিদির কথায় কান্না থামিয়ে বলে, তার জাদুর পেন্সিলটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে জাদুর পেন্সিল দিয়ে স্কুলের জ্বর ভালো করে দেবে। আবার স্কুলে যাবে। সে দিদিকে এসব বলতে থাকে আর কান্না করতে থাকে।

তখন তুতনের মা বুঝতে পারলেন যে, তুতুন স্বপ্ন দেখেছে। আর দেখবে নাই বা কেন! করোনা মহামারির জন্য এতদিন স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলের জন্য তুতুনের মন খারাপ হয়েছে। তাই সে স্কুল ও তার বন্ধুদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে।

লেখক: আব্দুর রহমান। শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা (৩য় বর্ষ), পাইজার, বি ইউ পি

ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :