দুই ভাইকে খুনের দায়ে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড, চারজনের যাবজ্জীবন

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০২১, ১৫:৩৬ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২১, ১৬:৪৩

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
ঢাকাটাইমস

দীর্ঘ ২০ বছর পর শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও শরীয়তপুর জজকোর্টের পিপি হাবিবুর রহমান ও তার ছোট ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে ছয়জনের ফাঁসি, চারজনের যাবজ্জীবন ও তিনজনকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

রবিবার দুপুরে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৩৯ জন আসামিকে বেকসুর খালাসের আদেশও দেয়া হয়েছে।

এ মামলায় রায়ে বাদী পক্ষ অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছেন। রায়ের পরে বাদী পক্ষের সমর্থকরা কোর্ট সংলগ্ন পুলিশ বক্সের সামনে রাস্তায় ব্যরিকেড দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০০১ সালের ৫ অক্টোবর শরীয়তপুর জজকোর্টের সরকারী কৌশলী (পিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন কে আওয়ামী লীগের সভা চলাকালে নিজ বাসায় প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত হাবিব বাদী হয়ে তৎকালীন শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রায়ত কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গকে প্রধান করে নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ ৫৪ জনের নামে পালং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ১নং আসামিসহ কয়েকজনের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার বাদী নিহত পিপির স্ত্রী জিন্নাত হাবিব অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেন। নিম্ম আদালত নারাজি না-মঞ্জুর করে। পরে উচ্চ আদালতে নারাজি মঞ্জুর করে। পুলিশ তদন্ত করে পুনরায় ৫৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর আসামি পক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন করে মামলাটির কার্যক্রম বিলম্বিত করে। এরই মধ্যে আসামি কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ ও শাহজাহান মাঝি মৃত্যুবরণ করেন। কিছুদিন আগে এ মামলার বাদী জিন্নাত হাবীবও মৃত্যুবরণ করেন। 

দীর্ঘ ২০ বছর গত ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী নিহত পিপি হাবিবুর রহমান ও বাদীর বড় ছেলে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী অ্যাড.পারভেজ রহমানের স্বাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। এ মামলায় ২৮জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণের পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষ হয়। ওইদিন ২৬ জন আসামিকে আদালত জেল হাজতে পাঠানো হয়। 

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামি হলেন- শাহিন কোতোয়াল, শহীদ কোতোয়াল, শফিক কোতোয়াল, শহীদ তালুকদার, মজিবুর রহমান তালুকদার ও সলেমান সরদার। রায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয় সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার, বাবুল খান, ডাবলু তালুকদার ও রশিদকে। এছাড়া মামলায় মন্টু তালুকদার, আসলাম সরদার ও জাকির হোসেন মজনু সরদারকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় মৃত্যুবরণ করা এক আসামিসহ ৩৯ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। 

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শহীদ তালুকদার, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাবুল তালুকদার ও ২ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মজনু সরদার পলাতক রয়েছেন।

রায়ের দিন সকাল থেকে কড়া পুলিশ প্রহরায় ছিল আদালত প্রাঙ্গন। সরকারি কৌশলী অ্যাড. মীর্জা হজরত আলী রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মামলায় বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার পেতে উচ্চ আদালতে আপিল করব।

রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আপিল করার কথা জানান আসামি পক্ষের আইনজীবীও। ‘মামলায় আসামিরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।  ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো’- বলেন অ্যাড.মাসুদুর রহমান।

 

ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/ইএস