সেতুটি একদিনও ব্যবহার করা যায়নি

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০২১, ১৬:০৪ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২১, ১৬:২০

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বাদাঘাট-চানপুর সড়কের শান্তিপুর নদীতে নির্মিত সেতুটির সংযোগ সড়ক নেই। ফলে সেতুটি ব্যবহার হয়নি একদিনও।

এদিকে সেতুটি ব্যবহার করতে না পেরে অর্ধলক্ষাধিক জনসাধারণ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে। বর্ষায় নদীটি ডুবে থাকার কারণে এ পথে যাতায়াত করতে গিয়ে পড়তে হয় নানামুখী সমস্যায়।

৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নিম্নমানের সেতুটির টাকাগুলো সংশ্লিষ্টদের পকেটে গেছে বলে মনে করছেন সচেতনমহল ও ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে সরকারের এই টাকা লুটপাট করেছে আর সরকারের দুর্নাম রটাতে এমন দুরবস্থায় রাখা হয়েছে। সেতু নির্মাণের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সামান্য মাটির কাজ করেনি সেতুর দুই পাশে। এছাড়াও অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে ইউপি সদস্য আবু তাহের মিয়াও শতভাগ মাটির কাজ না করায় ও সংযোগ সড়ক না থাকায় নির্মাণের পর থেকে একদিনের জন্যও ব্যবহার হয় নি সেতুটি।

তাহিরপুর উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলজিইডি (সুনামগঞ্জ) হিলিপ প্রকল্প ৩২ লক্ষাধিক টাকা নির্মাণ ব্যয়ে সেতুটির দরপত্র আহ্বান করে। আহ্বানের পর নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী পায় সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার পারভেজ এন্টারপ্রাইজ।

জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বাদাঘাট-চানপুর সড়কটি দিয়ে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কের শান্তিপুর নদীতে সেতুতে উঠার জন্য দু-পাশে কোনো মাটি নেই। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প থেকে উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তিন লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। শান্তিপুর বাজারের উত্তর পাশ থেকে সেতু পর্যন্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্পে ইউপি সদস্য আবু তাহের মিয়াকে প্রকল্প প্রধান করা হয়। প্রকল্প চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রকল্পে শান্তিপুর বাজার থেকে কাজ শুরু করে সেতুর উত্তর পাশে দুই শতাধিক ফিট দূর পর্যন্ত মাটির কাজ করান। অবশিষ্ট সংযোগ সড়কটি অসম্পূর্ণ রেখে দেয়। ফলে ২০১৮ সালে বর্ষায় সেই মাটিও সড়ে যায়।

উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য জনপ্রিয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুক মিয়া জানান, নির্মাণের পর সেতুটি ব্যবহার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেয় নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্বসাধারণের জন্য সেতুটি চলাচলের উপযোগী করতে হলে প্রটেকসন ওয়াল দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে। আর সেতুর সংযোগ সড়ক হলে এলাকার অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হত।

চানপুর গ্রামের বাসিন্দা রনি, আব্দুর রাশিদ বলেন, ‘সংযোগ সড়কটি স্থাপন করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হলে আমরা সহজেই চানপুর-বাদাঘাট সড়ক ব্যবহার করে তাহিরপুর সদরে যাতায়াত করতে পারতাম।’

তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইকবাল করিব জানান, ‘আমি একবারেই নতুন। তাই এই সেতুটির বিষয়ে আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, এই সেতুর সঙ্গে সড়কের সংযোগ না থাকায় সেতুটি কোনো কাজেই আসছেনা। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এই পথে চলাচলকারী সবাই।   

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘জনদুর্ভোগ লাঘবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলব।’

(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/পিএল)