ছেলে-মেয়ের দ্বন্দ্বে থানায় রাত কাটল বৃদ্ধার

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ মার্চ ২০২১, ১৮:২২ | প্রকাশিত : ২১ মার্চ ২০২১, ১৮:০৭

সারারাত থাকলেন থানায়। পরের দিন আদালত ঘুরে শেষ পর্যন্ত ছেলের কাছে নয়, মেয়ের কাছেই গেলেন অশীতিপর বিধবা রাহেলা বেগম(৮৪)। তিনি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়ুইচূড়া ইউনিয়নের পূর্ব নলছিয়া গ্রামের মৃত উসমান গণির স্ত্রী। ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

মাদারগঞ্জের পূর্ব নলছিয়া গ্রামের বিধবা রাহেলা বেগমের এক ছেলে ও চার মেয়ে ছিল। এর মধ্যে দ্বিতীয় মেয়ে মনোয়ারা বেগম বেঁচে নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর রাহেলা স্বামীর বাড়িতে বড় ছেলে আলতাফুর রহমানের কাছে থাকা শুরু করেন। সেই বাড়িতে ভালোমতো বসবাস করছিলেন।

মূলত মায়ের কিছু সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বড় ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয় বাকি তিন বোনের। সেই বিরোধের জের ধরে ছেলে আলতাফুর রহমানের মানসিক নির্যাতনে তার মা রাহেলা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ তুলেন রাহেলার মেয়ে আনোয়ারা বেগম। সেই অভিযোগসহ তাকে সুচিকিৎসা দেয়ার জন্য আনোয়ারা তার মাকে তার জিম্মায় দেয়ার জন্য গত বুধবার (১৭ মার্চ) মাদারগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে মাদারগঞ্জ থানা থেকে নারী পুলিশ সদস্যসহ একদল পুলিশ বুধবার বিকালে পূর্ব নলছিয়া গ্রামে যান বৃদ্ধা রাহেলাকে উদ্ধার করতে। এ সময় আলতাফুর রহমান, তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা বৃদ্ধা রাহেলাকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ কোনো কর্ণপাত করেনি। পুলিশ একটি সিএনজিতে করে ওই বৃদ্ধা রাহেলাকে থানায় নিয়ে যায়। ওইদিন বিকাল থেকে পরের দিন বেলা ১টা পর্যন্ত বৃদ্ধা রাহেলা মাদারগঞ্জ থানা হেফাজতে ছিলেন।

কিন্তু বৃদ্ধা যেতে চান তার আরেক মেয়ে আয়শা বেগমের কাছে। স্বজনদের রশি টানাটানির জের ধরে প্রথমে থানা হেফাজতে, পরে আদালতের আদেশে বৃদ্ধার ইচ্ছা পূরণের লক্ষ্যে পুলিশ তাকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজির করে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য।

আদালত এক আদেশে মেয়ে আনোয়ারা বেগমের কাছে বৃদ্ধাকে থাকার আদেশ দেন।

মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহবুবুল হক জানান, বৃদ্ধা রাহেলার মেয়ে আনোয়ারা বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে নিরাপত্তার কথা ভেবে বৃদ্ধা রাহেলাকে বুধবার বিকালে তার ছেলের বাড়ি পূর্ব নলছিয়া থেকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। তিনি যেহেতু আসামি নন, তাই তাকে গারদখানায় রাখা হয়নি। তাকে থানায় আনার পর থানার নারী ও শিশু সহায়তা ডেস্কের দায়িত্বে থাকা নারী পুলিশ সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। বুধবার রাতে তাকে ভালো খাবারের ব্যবস্থাসহ কম্বল বিছানাও দেয়া হয়।

ওসি জানান, তাকে থানায় আনার পর রাতে তার ছেলে আলতাফুর রহমান ও তিন মেয়েকে নিয়ে থানায় বৈঠক হয়েছে। আনোয়ারা তার মাকে তার জিম্মায় চেয়ে আবেদন করলেও বৃদ্ধা রাহেলা তার ছোট মেয়ে আয়শার কাছে যেতে চান। ফলে এ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হলে রাহেলাকে আদালতের মাধ্যমে তার তিন মেয়ের যেকোন একজনের জিম্মায় দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার যথারীতি বৃদ্ধা রাহেলাকে নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ চেয়ে জামালপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সোলায়মান কবীরের আদালতে আবেদন করেন থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সুজন মিয়া। পরে বৃদ্ধা রাহেলাকে মেয়ে আনোয়ারা বেগমের কাছে নিরাপদ হেফাজতে থাকার আদেশ দেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সোলায়মান কবীর। আদালতের আদেশের পর আয়শা ও অন্য দুই বোন তাদের মাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান।

এদিকে রাহেলার ছেলে আলতাফুর রহমানের অভিযোগ, তার বৃদ্ধা মা রাহেলা তার বাড়িতে স্বস্তিতেই জীবনযাপন করেছেন। তার ওপর কোনো মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। তার প্রতি কোনো অযত্ন-অবহেলা করা হয়নি। কিন্তু মায়ের কিছু সম্পত্তির লোভে তিন বোন জোটবব্ধ হয়ে মাদারগঞ্জ থানায় মিথ্যা অভিযোগ করে প্রভাব খাটিয়ে মাকে তার বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

আলতাফুর রহমান মাকে তার জিম্মায় নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার একজন আইনজীবীর মাধ্যমে একই আদালতের বিচারকের কাছে আবেদন করেছেন। ওই আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সোলায়মান কবীর আলতাফুর রহমানের আবেদন গ্রহণ করে আগামী ২২ মার্চ এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :