মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী শুভপুর ব্রিজ এখন মরণফাঁদ

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
 | প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০২১, ০৮:২৫

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বুকে ধারণ করে জরাজীর্ণ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৬৮ বছরের পুরনো ফেনীর শুভপুর ব্রিজ। ছাগলনাইয়ার শুভপুর থেকে মিরসরাই উপজেলার করেরহাটের মাঝামাঝি ফেনী নদীর ওপর এই ব্রিজ এখন ধ্বংসের পথে।

পাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সেতুর পিলারের পাশের মাটি সরে যাচ্ছে। পিলারগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে। যেকোনো সময় সেতুটি ধসে পড়তে পারে আশঙ্কা এলাকার মানুষের। দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সড়ক বিভাগ।

ভাঙন ও ফাঁটলের কারণে নাজুক অবস্থার মধ্যে সেতুটি এখন এক মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। স্থায়ীভাবে মেরামত না হওয়ায় দিন দিন ঝুঁকিতে পড়ছেন ব্যবহারকারীরা।

১৯৮০-এর দশকে সরকারি অর্থায়নে শুভপুর ব্রিজের যুদ্ধ নিয়ে ‘কলমিলতা’ নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ও অংশগ্রহণে শুভপুর ব্রিজ নিয়ে যুদ্ধভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। সেতুর খুব কাছাকাছি গেলে এখনো দেখা যায় অসংখ্য বুলেট ও কামানের আঘাতের চিহ্ন, যা স্মরণ করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের কথা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫২ সালে স্থাপিত ১২০০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় গোলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ঢালাইয়ের কার্পেটিংয়ের রড নিচের দিকে ধসে যাওয়া ও কাঠামো দুর্বল হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ইস্পাত দিয়ে ১২৯ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি পরে নদীর প্রশস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৬৮ সালে আরও ২৪৯ মিটার সম্প্রসারণ করা হয়। এতে করে ব্রিজের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৩৭৪ মিটার। এটি ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কে তৎকালীন দীর্ঘতম সেতু।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, চট্টগ্রাম তথা মীরসরাইয়ের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত এ ব্রিজের দখল নিতে ১৯৭১ সালে দফায় দফায় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। পাকিস্তানি বাহিনী যাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এ ব্রিজ অতিক্রম করে চট্টগ্রাম প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধারা যেমন ব্রিজটি ধ্বংসের চেষ্টা চালায়, তেমনি ব্রিজটি রক্ষা ও দখলে রাখার জন্যও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল হানাদার বাহিনী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন জানান, শুভপুর ব্রিজের যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ বলে স্বীকৃত। কারণ চট্টগ্রামের যত মুক্তিযোদ্ধা ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ ও আশ্রয় নেন, তারা এ শুভপুর ব্রিজ অতিক্রম করে গিয়েছিলেন। ব্রিজের ১০ নম্বর পিলারে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত করে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিলে এ অংশ হানাদারমুক্ত হয়।

ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, ব্রিজটি কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের ইতিহাসের অংশ। এই জায়গায় নতুন ব্রিজ তৈরির প্রক্রিয়া চলমান। নতুন ব্রিজ হলেও পুরোনো ব্রিজটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্বরূপ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হবে।

ফেনী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ জানান, নদীর গতিবিধি নির্ণয়ের জন্য হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল স্টাডি শেষ হয়েছে। দ্রুত এই প্রতিবেদন পেশ করা হবে। এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ব্রিজের ডিজাইন করা হবে। এরপর সেতুর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ কাজ শুরু হবে।

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :