করোনা সংক্রমণ কমাতে পারে ‘মক আপ’

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ মার্চ ২০২১, ০৯:৫৭ | প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০২১, ০৯:৫৫

গ্রীষ্মের প্রারম্ভে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিশেষজ্ঞদের কপালে। চলতি মাসে ২১ দিনের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষার হার দুই থেকে ছাড়িয়ে প্রায় ১১ শতাংশে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় সাধারণ ছুটি তথা লকডাউনের থেকেও মক আপ পদ্ধতি সংক্রামক ভাইরাসটির গতি কমিয়ে আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত বছরের সাধারণ ছুটির তথা লকডাউন নিয়ে সব মহলেরই এক ধরণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। বিশেষ করে জনবহুল দেশ হওয়ায় জীবিকা নিয়ে সংকটে পড়ে অনেক মানুষ। সেই ছুটি তুলে নেয়া হলে গত শীতকালে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু হয়।

তবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধির উপেক্ষা, নির্বিচারে জনসমাগম, সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং করোনাভাইরাস ঠেকাতে অত্যবশকীয় মাস্ক পরিধানে অনীহা দেশে মহামারী পরিস্থিতি গত বছরের গ্রীষ্মের মতো হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যবিদরা।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সুস্পষ্ট পরামর্শও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সবকিছু ঠিক রেখে বেশি সংক্রমিত এলাকায় মক আপ পদ্ধতির আলোকে নির্ধারিত এলাকার সবার করোনা পরীক্ষা করতে হবে। রোগী শনাক্ত করা হলে তাদের আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যাদের পরীক্ষা করা হবে তাদের রিপোর্ট দিয়ে দিতে হবে।

মক আপের বিষয়ে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেখানে মক আপ করা যায়।

তিনি বলেন, ‘কিছু বন্ধ না করেই নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট এলাকায় সবাইকে পরীক্ষা করার পর যাদের পজিটিভ আসবে তাদের আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। যখন তাদের নেগেটিভ আসবে তখন তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করবে। আর যারা আক্রান্তদের আশপাশের তাদের কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। বাকি সব কাজ চলবে। তাহলে মানুষ সহযোগিতা করবে। আক্রান্তের হারও কমানো সম্ভব হবে।’

এখনো কাগজে কলমে মক আপের বিষয়ে প্রস্তাব না দিলেও চলতি সপ্তাহে করোনাভাইরাস বিষয়ক কারিগরি কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। সংক্রমণের হার আরও বাড়লে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে মক আপের মত পদ্ধতিতে গেলে তা লকডাউনের চেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে বলে মনে করেন আইইডিসিআরের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মুহাম্মদ মুশতাক হোসেন।

মক আপ কি

মক আপ হলো করোনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা। অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মক আপের বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যেমন ধরুন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বলে দেয়া হলো এখানে সবার করোনা পরীক্ষা করা হবে। কেউ এই সময়ের মধ্যে কোথাও যাবেন না। পরে রাতের মধ্যে সবার স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার ফলাফলে যাদের পজিটিভ আসবে তাদের আইসোলেটেট করে ফেলতে হবে। শনাক্ত ব্যক্তির বাড়ির সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে হবে। আর যাদের নেগেটিভ আসবে তাদের ছেড়ে দিতে হবে। তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করবে। এই পদ্ধতিতে মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবে আবার সংক্রমণ ঝুঁকিও এড়াতে পারবে।’

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর এপ্রিল পর্যন্ত সংক্রমণের হার একের অংকে ওঠানামা করলেও মে থেকে এই হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় জুলাই মাসে। সেসময় সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ ৩৩ শাতংশ ছাড়িয়ে যায়। পরে আগস্ট থেকে সংক্রমণের হার পর্যায়ক্রমে নামতে থাকে। নভেম্বরে কিছুটা ওপরে ওঠার পর ডিসেম্বরে আবার নামতে শুরু করে।

চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শনাক্তের সংখ্যা কমতে থাকে। সবশেষ ২৫ জানুয়ারি ৬০২ জন শনাক্ত হয়। এরপর পাঁচ সপ্তাহ দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয়শোর নিচে ছিল। এমনকি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তিনশোর নিচেও নেমেছিল।

মার্চের শুরুর দিকে ৩ মার্চ থেকে শনাক্তের সংখ্যা টানা তিনদিন (৬১৪, ৬১৯, ৬৩৫) ছয়শোর বেশি হয়। এরপর ৯ মার্চ ৯১২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় তখন শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।

এরপর গত ১০ মার্চ শনাক্তের সংখ্যা আবারও হাজার ছাড়ায়, যা তার আগের দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। এর মধ্যে ১৪ মার্চের পর থেকে হঠাৎ করেই সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে যায়। সেদিন আক্রান্ত হয় ১৭৭৩ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালায় বলা হয়েছে, টানা দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। বাংলাদেশে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল টানা আট সপ্তাহের বেশি। তবে সবশেষ রবিবার দেশে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২৯ হয়েছে।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে করোনা শনাক্ত বৃদ্ধির কারণে লকডাউন দেয়াসহ ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এমন বাস্তবতার মধ্যেও নতুন করে সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের কথা সরকার ভাবছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এদিকে সংক্রমণ বাড়ায় জনগণকে স্বাস্থবিধি মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ কড়াকড়ি আরোপ শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পুলিশের পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণসহ শুরু হয়েছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম।

আইইডিসিআরের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মুহাম্মদ মুশতাক হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘লকডাউনে না গিয়ে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে। সংক্রমণ বেশি হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা যায়। সব কিছু স্বাভাবিক রেখে পরীক্ষার পর দ্রুত ফলাফল দিয়ে দিতে হবে। যাদের করোনা পজিটিভ আসবে তাদের শতভাগ আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে।’

মক আপের আদলে একসঙ্গে এলাকা চিহ্নিত করে একইদিনে অনেক মানুষকে পরীক্ষা করার জনবল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেই জানিয়ে আইইডিসিআরের অন্যতম এই উপদেষ্টা বলেন, এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে সুফল পাওয়া সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/বিইউ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :