উগ্রবাদীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়েছে লন্ডনের যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২১, ১৮:০৩

মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন থেকে

লন্ডনে যুদ্ধাপরাধ বিচারমঞ্চ আয়োজিত ভার্চুয়্যাল আলোচনা সভা হয়েছে গত ২১ মার্চ লন্ডন সময় বিকাল চারটায়। এসময় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীতে কয়েকটি উগ্রবাদী সংগঠনের ব্যানারে শানে রিসালত সম্মেলনের নামে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে তাদের ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন  আলোচকরা।

তারা বলেন, ‘যারা ধর্মের দোহাই তোলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করছে তারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা বিরোধী এবং পাকিস্তানীদের দোসর।  এই স্বাধীনতা বিরোধী উগ্রবাদী গোষ্ঠী বিভিন্ন সময় ধর্মকে ব্যবহার বাংলাদেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করতে চাইছে। এরা ১৯৭১ সালে আলবদর, রাজাকার ও আলসাম বাহিনী গঠন করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীদের সঙ্গে নিয়ে গণহত্যা চালিয়ে ছিল। পরবর্তীতে এদেরই একটি অংশ আফগান বিপ্লবে অংশ নেন এবং এদের দ্বারাই গড়ে উঠে হেফাজতে ইসলাম। এই হোফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।’

তারা আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলাটিম ও নব্যজেএমবির সদস্যদের সকলেই আফগান ফেরত তালেবান। তাদের মদদ দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন জামাতে ইসলামী। আজকের হেফাজেতে ইসলাম, শানে রিসালত, ছাত্র অধিকার ও যুবঅধিকার এবং খেলাফত মজলিশের মত সংগঠন গুলো জামাতের নতুন সংস্করণ। এরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেনা। এরা সবসময়ই সাম্প্রদায়িক। এই বলছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তারা প্রতিহত করবে।  জামাতের ইন্দনে উগ্রবাদীরা এমনটি করছে। শুধু তাই নয় দেশে বিদেশে এই স্বাধীনতা বিরোধীরা গড়ে তুলেছে অসংখ্য সংগঠন। এর মধ্যে অন্যতম হল ব্রিটেনের বাংলাদেশী মুসলিম ইন ইউকে। যদিও এই সংগঠনটি সর্বদলীয় ওলামা পরিষদ হিসেবে পরিচিত এর মাধ্যমে চালানো হয় বর্তমান সরকার এবং ভারত বিরোধী অপপ্রচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের জয়গান।’

পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর-এর নির্দেশে একাত্তরের পরাজিত শক্তি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে উল্লেখ করে আলোচকরা উগ্রবাদী হেফাজতে ইসলামের সকল কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অমিমাংসিত সসম্যা বিশেষ করে বাংলাদেশে আটকে থাকা ত্রিশ লাখ পাকিস্তানীকে ফিরিয়ে নেয়া, বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা ফেরত, ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের জন্যে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর, একাত্তরের গণহত্যার জন্যে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

এছাড়াও বক্তারা সুনামগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট ও নারীদের নির্যাতন করার জন্যে হেফাজতে ইসলামকে দায়ী করেন। এবং হেফাজতের সকল কার্যক্রম বন্ধ ও শাল্লার নেয়াগাঁও গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।  

ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অতিথি হিসেবে যোগ দেন- বাংলাদেশ থেকে শহীদ সন্তান নুজহাত চৌধুরী, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজ, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশনের মিনিষ্টার প্রেস আশিকুননবী চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সুইডেন চাপ্টারের সেক্রেটারী তরুণ কান্তি চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অপু চৌধুরী ও যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চের কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট খালেদুর রহমান শাকিল।

এলএনটুয়েন্টি ফোরে রূমী হকের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন- যুদ্ধাপরাধার বিচার মঞ্চের চেয়ারপার্সন মতিয়ার চৌধুরী ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আনসার আহমেদ উল্লাাহ।

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/পিএল)