ঘরে বাইরে লাপাত্তা স্বাস্থ্যবিধি

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২১, ১১:৩৩ | প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২১, ১১:২৬

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও তা আমলে নিচ্ছে না সাধারণ মানুষ। একদিকে মাস্ক পরতে অনীহা অন্যদিকে স্বাভাবিক সময়ের মতই চলছে সামাজিক নানা অনুষ্ঠান। অন্যদিকে দিনে দিনে দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্ত বাড়ছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভীড়। করোনা পরীক্ষা করতে বুথগুলোতে তৈরী হচ্ছে লম্বা লাইন। মার্চের শুরু থেকে গত তিন সপ্তাহে করোনা শনাক্তের হার দুই থেকে বেড়ে ১১শতাংশে এসে ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতিকে আশঙ্কাজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনার এমন পরিস্থিতির জন্য স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে অবাধে চলাফেরাকে দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারকে তারা এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন। অন্যথায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুহাম্মদ মুশতাক আহম্মেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অবশ্যই শনাক্তের এমন হার আশঙ্কাজনক। আমাদের জন্য উদ্বেগজনকও। কারণ বাস্তর পরিস্থিতি আরো খারাপ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান শেষ হলে সেটা দেখা যাবে।’

স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করায় এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে এমন মন্তব্য করে এই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, ‘মাস্ক পরা, আক্রান্তদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন পুরোপুরি নিশ্চিত না করলে কোনো লাভ হবে না। এখনই সিরিয়াস হতে হবে। কারণ করোনার এখনকার ধরণ কিন্তু ভিন্ন।’

এদিকে করোনার সংক্রমণের গতি টানতে কয়েকমাস পর আবারো শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত চলছে অভিযান। মাস্ক না থাকলে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে মাস্ক।

এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আনন্দভ্রমণ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হলেও থেমে নেই কোনো কিছু।

এমন বাস্তবতায় রোগীর সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে সঠিক চিকিৎসা নেয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘এখনই যদি সতর্ক না হই, স্বাস্থ্যবিধি না মানি, তাহলে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। যা আমরা এখনও বুঝতে পারছি না। কারণ, আমাদের হাসপাতালগুলোতে তো লাখো মানুষের জায়গা হবে না। কোথায় চিকিৎসা হবে? কে চিকিৎসা দেবে এত মানুষকে?’

গতবছরের মার্চে দেশে করোনার প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। একমাস পর ওইবছরের মে থেকে শনাক্তের হার বাড়তে থাকে। সবথেকে বেশি সংক্রমণ পৌঁছায় জুলাই মাসে। সেসময় সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ ছাড়েিয় গেলেও আগস্ট থেকে সংক্রমণের হার নামতে থাকে। নভেম্বরে কিছুটা ওপরে ওঠার পর ডিসেম্বরে আবার নামতে শুরু করে। যা চলতি বছরের প্রথম দুইমাসে কমতির দিকেই ছিল। কিন্তু মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবার বাড়তে থাকে। যা ক্রমেই বাড়ছে।

মার্চের শুরুর দিকে ৩ মার্চ থেকে শনাক্তের সংখ্যা টানা তিনদিন (৬১৪, ৬১৯, ৬৩৫) ছয়শোর বেশি হয়। এরপর ৯ মার্চ ৯১২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় তখন শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। ১৪ মার্চের পর থেকে হঠাৎ করেই সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে যায়। সেদিন আক্রান্ত হয় ১৭৭৩ জন। সবশেষ গতকাল সোমবার সাতমাস পর বেশি শনাক্ত হয়। একদিনে শনাক্ত হয় ২ হাজার ৮০৯জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় যার শনাক্তের হার ১১ দশমিক ১৯।

এদিকে করোনার প্রকোপ বাড়ায় নতুন করে লকডাউন দেয়াসহ ১২দফা সুপারিশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গুঞ্জন আছে, গতবছরের মত লকডাউনের বদলে সহসাই সাধারণ ছুটি ঘোষণা হতে পারে। যদিও ছুটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লকডাউনের সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ কমাতে এরআগে লকডাউনের চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু কার্যকর হয়নি। সামনেও হবে না। শুধু শুধু মানুষের দুর্ভোগ হবে। তার থেকে মক আপ পদ্ধতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের করোনা পরীক্ষা করা যেতে পারে। এটা ভালো হবে।’

একই ধরণের কথা বলেছেন ডা. মুশতাক আহম্মেদও। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘লকডাউন দেশে খুব একটা কার্যকর হবে বলে মনে করি না। সেক্ষেত্রে বেশি সংক্রমিত এলাকার সব বাসিন্দাদের একযোগে করোনা পরীক্ষা করে দ্রুত রিপোর্ট দিতে হবে। যাদের পজিটিভ আসবে তাদের আইসোলেশনে পাঠাতে হবে। আশপাশের লোকদের কোয়ারেন্টাইনে নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কোনো উদ্যোগেই লাভ হবে না।’

ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/বিইউ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :