মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রা

ইলিয়াস সানি
| আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২১, ১৩:০১ | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০২১, ১২:৫৭

তুমি এনেছিলে মৃত্যুহীন প্রাণ,

করে গেলে বাঙালিরে দান।

কে না জানে সে বজ্রকণ্ঠ!

রক্ত ছুঁয়ে যাওয়া তোমার আহ্বান।

লড়েছো, মরেছো তবুও হারোনি।

তোমারই দেখানো পথে,

শেখ হাসিনার বিজয় কেতন ওড়ে।

শেখ হাসিনা আজও লড়ে।

হাজার বছরের বাঙালির দাসত্বের বেড়াজাল ভেঙে, মুক্তি সংগ্রামের সুবাতাস এনে, অজস্র রাজনৈতিক অচলায়তনের বিরুদ্ধে সমস্বর কন্ঠস্বরের প্রতিচ্ছবি পিতা মুজিব। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বাঙালির স্বপ্নের মহারথী হয়ে, প্রস্ফুটিত গোলাপের প্রজ্জ্বলিত পাপড়ির নির্যাস ছড়িয়ে, স্বাধীনতা শব্দটাকে একান্তই আপন করে নেওয়ার সুদৃঢ় হাতিয়ারের অবয়বের নাম পিতা মুজিব।

শত সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিব, বাঙালির স্বাধীনতার রুপকল্প এঁকেছিলেন, উপমহাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেই।

তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, শুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিপরীতমুখী দুটি ভূখন্ড কখনও এক হতে পারে না। সেই থেকেই বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের সুবাতাস এনে দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন বঙ্গবন্ধু। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি বাঙালির স্বপ্নের স্বাধীনতা মুঠো ভরে এনেছিলেন।

সময়ের পরিক্রমায় কিছু বিপদগামী বৈদেশিক এজেন্টের ভুলে আবারও বাংলার সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো পচাত্তরে।

একুশ বছর স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিরা ইতিহাস মুছতে বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু, পিতা মুজিবের রক্তের ইতিহাস যে, কোটি বাঙালির হৃদয়ে অমুছনীয় কালিতে খোদাই করা হয়ে গিয়েছিলো, সে কথা হয়তো তারা জানতো না।

অবশেষে ছিয়ানব্বইয়ে সরকার গঠনের মাধ্যমে তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পিতা মুজিবের অবয়ব হয়ে উঠেছেন। একটা ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত উন্নয়নশীল দেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলে ধরেছেন। পিতা মুজিবের জন্মশতবর্ষে এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী লগ্নে এসেও একটা স্বাধীনতা বিরোধী প্রেতাত্মা গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা মানসিকতাই যথেষ্ট তাদের স্বপ্নে চপেটাঘাত করার জন্য।

১৯৪৭ সাল। ব্রিটিশের প্ররোচনায় উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধর্মীয় বিভাজনের সীমারেখায় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির নেশায় মত্ত। ব্যতিক্রম ছিলেন একজন মানুষ; শেখ মুজিবুর রহমান। মুসলিম লীগের তৎকালীন প্রগতিশীল ধারার তরুণ নেতা ২৭ বছর বয়সী শেখ মুজিব দুই বাংলার বাঙালিদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করলে গঠন করা হয় বেঙ্গল মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটি।

তীব্র জনমতের মুখে বেঙ্গল মুসলিম ওয়ার্কিং কমিটি এক ঐতিহাসিক ফর্মুলা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে। তাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। জনসাধারণের ভোটে একটা গণপরিষদ হবে। সেই গণপরিষদ ঠিক করবে বাংলাদেশ হিন্দুস্থান না পাকিস্তানে যোগদান করবে, নাকি স্বাধীন থাকবে? ১৯৪৭ সালে এই ফর্মুলা নিয়ে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বাঙালি নেতা শরৎ চন্দ্র বসু দিল্লিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও জহরলাল নেহেরুর সাথে দেখা করতে যান। শরৎ বসু কংগ্রেসের নেতাদের সাথে দেখা করতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। গান্ধী ও পণ্ডিত নেহেরু কোনো কিছুই না বলে শরৎ বাবুকে পাঠিয়ে দেন কংগ্রেস নেতা সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের কাছে। আর মিস্টার প্যাটেল শরৎ বাবুকে খুব কঠিন কথা বলে বিদায় দিয়েছিলেন। কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যোগসাজশে ১৯৪৭ সালে যুবক শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। সেই স্বপ্ন মহান পুরুষ মুজিব পূরণ করেছিলেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে। মহাসংগ্রামী আর দীর্ঘ ছিল সে পথচলা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদদের তাজা রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বাধীনতা। তারপরের ইতিহাস কার না জানা! পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তির পর, দেশে ফিরেই তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেন। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধির মানবিক বিচক্ষণতায় যেমন আমাদের বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছিল, ঠিক তেমনই বহির্বিশ্বের চিন্তা কে ভুল প্রমাণিত করে বঙ্গবন্ধুর কুটনৈতিক বিচক্ষণতায় ভারতীয় সেনাবাহিনী ১২ মার্চ বিদায়ী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাড়ে। বঙ্গবন্ধু নব উদ্যমে দেশ গড়ায় মনোনিবেশ করেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমর্থনেও ওনার কুটনৈতিক বিচক্ষণতা আজও সারা বিশ্বে সমাদৃত।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও দেশ গঠনের অর্থ সংগ্রহে সারাবিশ্ব দাপিয়ে বেড়িয়েছেন আমৃত্যু। সারাবিশ্বের জন্য একজন বিনয়ী অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পেরেছিলেন অল্প সময়ের মধ্যেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে সে সময় ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, "আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়াস। বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব। ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইস দ্য হিমালয়াস। আই হ্যাভ দাজ হ্যাড দি এক্সপেরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়াস।"

আবারও বাঙালির স্বপ্ন ভঙ্গ! হায়েনাদের রক্তচক্ষুর রোষানলে পিতা মুজিব সপরিবারে নিহত হোন। মহান স্রষ্টার ইচ্ছায়, তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাহিরে থাকার সুবাদে প্রাণে বেঁচে যায়। তাঁরই রক্তের যোগ্য উত্তরসূরী শেখ হাসিনা হায়েনা-দুর্বৃত্তদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন।

পিতা মুজিবের অবয়ব হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন সেদিন। শত চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ছিয়ানব্বইয়ে সরকার গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূর্ণতায় রুপ দিতে বহুবার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন বীরদর্পে। মাঝে আবারও বাঁধা।

তারপর সেই কাঙ্ক্ষিত ২০০৮ সালে বিশাল বিজয়ের মাধ্যমে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আার পিছনে তাকাতে হয়নি। শেখ হাসিনার হাত ধরেই, রেসের ঘোড়ার মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তিও ছুটে চলছে দুর্নিবার। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে স্বীয় অর্থায়নের সক্ষমতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ আজ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। কতশত দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মুখে থুতু ছিটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শেখের বেটি। স্বপ্ন একটাই, বঙ্গবন্ধুর অপূর্ণ ইচ্ছে গুলোর পূর্ণতা দান।

এখনও শেখের বেটি জীবন সায়াহ্নে এসে তাহাজ্জুদের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করে কর্মমুখর দিনাতিপাত করে যাচ্ছেন। একসময়কার বাস্কেট কেসের এখন মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার, প্রায় সবগুলো অর্থনৈতিক সূচকেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। দক্ষিণ এশীয় ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে বাংলাদেশ এখন তুরুপের তাস।

এমনই এক মাহেন্দ্রক্ষণে এসে আমরা পিতা মুজিবের জন্মশতবর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পাশ্ববর্তী পাঁচ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বাংলাদেশ সফর, বিশ্বরাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ হর্তাকর্তাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ সহ ভিডিও বার্তায় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা, আন্তর্জাতিক কুটনৈতিক সফলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সকল অপশক্তি কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেখ হাসিনাই বিজয় কেতন উড়িয়ে বাংলাদেশ কে রূপকল্প ২০৪১ এ একটি সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন।

শেখের বেটি অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখে যাবেন। মহান স্রষ্টার কাছে সেই মিনতিই রাখছি।

জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা শতায়ু হোন।

লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :