শাল্লায় ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০২১, ১৪:০৫

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হিন্দু অধ্যুসিত নোয়াগাঁও গ্রামে ফেইসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনার পর ঝুমন দাশ আপনের(২৮) বিরুদ্ধে শাল্লা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। জেলার শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের গোপেন্দ্র দাসের ছেলে ঝুটন দাস আপন (২৮)।

মামলার বাদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম। শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই মামলায় ঝুমন দাশকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এর আগে ১৬ মার্চ রাতে আটকের পর তাকে ১৭ মার্চ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত সেদিন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

ওসি নাজমুল হক জানান, গত ১৭ মার্চ ফেসবুকে হেফাজত নেতা আল্লামা মামুনুল হককে কটাক্ষ করে ঝুমন দাশের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে গত বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালিয়ে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ওসি বলেন, এ ঘটনায় ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দেড় হাজার মানুষের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। মামলায় প্রধান আসামি শহীদুল ইসলাম স্বাধীনসহ ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘিরে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। কেউ বলছেন মামুনুল হকবিরোধী ফেসবুক পোস্টকে সামনে রেখে স্থানীয় রাজনীতি ও একটি জলমহাল নিয়ে এ তাণ্ডব চালানো হয়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার পর বেরিয়ে আসাতে শুরু করেছে মূল ঘটনা।

ঘটনার নেপথ্যে:

অনুসন্ধানে জানা যায়, দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন বরাম হাওরের কুচাখাই বিলের ইজারাদার। তিনি বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরায় ফসলি জমির পানি সংকট দেখা দেয়। অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ করায় নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুটন দাসসহ গ্রামের অনেক কৃষকই প্রতিবাদ করে আসছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ দন্দ্র দাস শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে স্বাধীন মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এর পর থেকে ক্ষেপে ওঠেন স্বাধীন মেম্বার ও একই গ্রামের পক্কন মিয়া।

এদিকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব গত ১৫ মার্চ দিরাই সমাবেশে বক্তব্য দেন। হেফাজতের এই নেতাকে নিয়ে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুটন দাস আপন নামে এক ব্যক্তি গালমন্দ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। স্বাধীন মেম্বার ফেইসবুকের পোস্টকে কাজে লাগিয়ে চার গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করেন। প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে নোয়াগাঁও গ্রামে স্বাধীন মেম্বারের নেতৃত্বে বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙচুর হয়।

এই ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। দুই মামলার একটির বাদী শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম। অন্য মামলার বাদী স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল। চেয়াম্যানের নিজ বাড়ি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে। যেখানে হিন্দুদের বাড়িঘরে বুধবার সকালে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ দিরাই থানার সরমঙ্গল ইউনিয়নের চন্দ্রপুর, নাচনী এবং শাল্লা থানার হবিবপুর কাশিপুর গ্রামের ১৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে ঘটনার উস্কানিদাতা নাচনী গ্রামের বাসিন্দা সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও যুবলীগ সভাপতি স্বাধীন মিয়াকে।

এ ঘটনায় থানায় মামলার পর গত বৃহস্পাতিবার গভীর রাতে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে স্বাধীন মেম্বারকেও গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলায় প্রধান আসামি শহীদুল ইসলাম স্বাধীনসহ মোট ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জেলার দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম স্বাধীন ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের বাড়ি শাল্লা উপজেলার পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের নাচনি গ্রামে।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :