বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদকে সম্মানিত করল ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চ

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ মার্চ ২০২১, ১৫:০৮

বীর মুক্তিযোদ্ধা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি নূর মোহাম্মদকে(৮৭) অভিবন্দনা জানিয়েছে ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির শুভক্ষণে এই বীর সেনাকে এ সম্মাননা দেয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১০টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন।

শুরুতে ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’-শিল্পী নিলয় চক্রবর্ত্তীর গাওয়া গানের মধ্যে নূর মোহাম্মদকে মঞ্চে নিয়ে আসেন নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা। এসময় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন নূর মোহাম্মদ।

পরে ‘অভিবন্দনা’ পাঠ করেন নাগরিক মঞ্চের সদস্য বিপ্লব বালা। অভিবন্দনার শুরুতে বলা হয়, ‘নূর মোহাম্মদ দেশ ও জাতির মনে আপনার জন্য চিরস্থায়ী আসন পাতা হয়েছে ৫৩ বছর আগেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রদানকালে। যেন এক অজ্ঞাত বাসে, ৬২ থেকে ৬৪ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সলতে পাকিয়েছিলেন পরশ নামের আড়ালে পরশমনি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বসে নাম নিয়েছিলেন আপনি সবুজ। সে ছিল পবিত্র এক শিখা প্রজ্জ্বলন আপনাদের, একদিন যার ফুলকি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলার ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে।’

পরে নূর মোহাম্মদকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান ও নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আশরাফউজ্জামান মুরাদ। সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সপ্তাশীতম বর্ণীল বসন্ত অতিক্রান্ত ঋজুদেহী স্পস্টভাষী নূর মোহাম্মদ বলেন, পাকিস্তানী নৌবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় বঞ্চনার কথা জানতে পেরে দেশের মুক্তির কথা ভেবেছি। মুক্তিযুদ্ধে গ্রামের গরীব, সহজ, সরল খেটে খাওয়া মানুষকে নিয়ে গড়া মুক্তিবাহিনীর একটি অংশের নেতৃত্ব দিয়েছি। কোনো বড়লোক যুদ্ধ করেনি। এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল সাধারণ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যুদ্ধে যেসব সহযোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন তাদের লাশ সহযোদ্ধাদের দেখতে পর্যন্ত দেয়নি, যেন তাদের মনোবল ভেঙে না যায়।’

নূর মোহাম্মদ বলেন, সম্মান বা সম্মাননা পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি। যুদ্ধ করেছি নিজের দেশের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য, পতাকার জন্য, একটি মানচিত্রের জন্য। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।

সভায় অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামীম হক, নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা খন্দকার আশরাফউজ্জামান মুরাদ, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী।

ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক বলেন, নূর মোহাম্মদের সব কাজ এক একটি ইতিহাস। প্রথমে মনে হতো তিনি উন্মাদের মতো কী সব করে যাচ্ছেন। পরে বুঝতে পেরেছি তিনি যা করেছেন সেটাই সঠিক। নূর মোহাম্মদের একক চেষ্টায় ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ইমাম উদ্দীন আহম্মাদের নামে ইমাম উদ্দিন স্কোয়ার নামকরণ, গণকবর চিহ্নিত করে সেখানে স্তম্ভ নির্মাণ এবং নিজের বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মিনি জাদুঘর নির্মাণ করা প্রভৃতি কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ‘শোন একটি মজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবের কন্ঠ স্বরের ধ্বনি’ ও ‘যে দেশে শালুক ঝিলের জলে ফোটে’- দেশাত্ববোধক এ গানগুলো পরিবেশন করেন শিল্পী অমল ঘোষ ও তার সহযোগীরা। সবশেষে জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সামাপ্তি ঘটে।

এছাড়া বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখানে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান, পৌর মেয়র অমিতাব বোস, বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২৬মার্চ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :