ত্রিশালে ৯৯ জন প্রভাবশালীর দখলে নদী

মেহেদি জামান লিজন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)
 | প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০২১, ১৮:৫১

ময়মনসিংহের ত্রিশালের ধানীখোলা ইউনিয়নে সুতিয়া নদীর প্রায় ৫০ একর জায়গা দখল করে মাছ চাষের জন্য বড় বড় পুকুর কেটেছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। পর্যায়ক্রমে নদীর জমি দখল করে পুকুর কাটা অব্যাহত রেখেছেন তারা। এ যেন নদী দখল করে পুকুর কাটার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে কাটা হয়েছে বড় বড় পুকুর। নদীর জায়গা দখল করে শুধু ধানীখোলা অংশেই রয়েছে প্রায় ৩০টি পুকুর। এছাড়াও নদীর ঐপারে বইলর অংশেও রয়েছে বেশ কয়েকটি পুকুর। মাঝেমধ্যে নদীর দিকে তাকালে মনে হয় দুই পুকুরের মাঝখান দিয়ে পানি যাওয়ার জন্য সরু একটা খাল কাটা হয়েছে।

বইলর বাঁশকুড়ি গ্রামের আব্দুল মালেক জানান, প্রায় ১৫-২০ বছর যাবত নদী দখল করে মাছ চাষ করে আসছে নদী দখলকারীরা। প্রথম নদী দখল করে মাছ চাষ শুরু করেছিল শামসুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। তিনি এখন জীবিত নেই। তার দেখাদেখি অনেকেই নদী দখল করে বড় বড় পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। তার মেয়েরা এগুলো ভাড়া দিয়েছেন।

মালেক বলেন, শুনেছি কয়েকবছর আগে স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে একটা দরখাস্ত দিয়েছেন। এখনো কোনো ব্যাবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ এক ব্যক্তি জানান, অনেক বছর ধরে নদী দখল করে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে কিছু লোক। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বাররা কিছু বলেন না। প্রশাসন থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই সুযোগে দিনকে দিন দখলকৃত পুকুরের সংখ্যা বাড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় স্কুলের এক শিক্ষক জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে নদী দখল হয়ে আসছে। এখন দখল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যাতে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। এভাবে চলতে থাকলে এটাকে আর নদী বলা যাবে না। মানুষের নৈতিক স্খলনই এই নদী দখলের জন্য দায়ী। প্রশাসনের উচিত নদী দখলমুক্ত করা।

তবে নদীর জমি দখলের বিষয়ে একাধিক মাছ চাষীর সঙ্গে কথা বললেও এই বিষয়ে তারা কথা বলতে রাজি হননি।

উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মানিক কুমার সরকার জানান, আমরা সুতিয়া নদী তীরবর্তী জমি দখল করে পুকুর খনন করে মাছ চাষের বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। কতটুকু নদীর জায়গা দখল হয়েছে তা সার্ভে না করে বলা মুশকিল। তবে নদীর জায়গা দখল করে মাছ চাষ করা অংশের পরিমান বেশ কয়েক একর হবে।

ধানীখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছাদুল্লাহ আছাদ বলেন, নদী দখলের বিষয়ে জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নদী দখলের বিযয়ে তিনি জরিপ করে প্রতিবেদন দিবেন। তারপর প্রশাসনকে সে অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে।

ত্রিশাল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম বলেন, নদী দখলের বিষয়ে মোট ৯৯ জনের একটি তালিকা হাতে পেয়েছি। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি সরেজমিনে নদীর বেদখল হওয়া জায়গা পরিদর্শন করেছি। নদী দখলের বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। তবে কে কতটুকু নদীর জায়গা দখল করে মাছ চাষ করছে তার জন্য সার্ভে করার প্রয়োজন হবে। সার্ভে করার মাধ্যমে দ্রুত নদী দখলমুক্ত করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮মার্চ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :