রেলপথ ও বিশ্ববিদ্যালয়: ঝিনাইদহ বাসীর প্রাণের দাবি

মো. শাহিন রেজা
 | প্রকাশিত : ৩০ মার্চ ২০২১, ১৪:৩৮

ঝিনাইদহ! আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাবধারী বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের জন্মস্থান। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে এই জেলার গৌরবান্বিত ইতিহাস। জেলাতে জন্ম গ্রহণ করেছে বাউলকুলের শিরোমনি লালন শাহ। কবি পাগলা কানাই, বিখ্যাত গণিতবিদ কে পি বসু, বাঘা যতীন, চিত্রশিল্পি মুস্তফা মনোয়ারসহ রয়েছেন তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িও ঝিনাইদহ জেলায়। রয়েছেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় আল- আমিন।

এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি খামার, দেশের সব চেয়ে বড় কালি মন্দির, মাছের হ্যাচারি, বৃহত্তম ও শতবর্ষী বটবৃক্ষ, নাম করা ক্যাডেট কলেজ, নীলকুঠি ও প্রাচীন পৌরসভা (মহেশপুর) এই ঝিনাইদহে অবস্থিত। ফলে বোঝায় যাচ্ছে ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলাটি।

মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা- সংস্কৃতিতে গৌরবের ইতিহাস ধারন করছে ঝিনাইদহ। প্রতিটা সরকার ঝিনাইদহে উন্নয়নে নজর দিলেও বেশ কিছু অপূর্ণতা রয়েছে এ জেলার মানুষদের। জেলাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও রেলপথ স্থাপন যেন প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

ঝিনাইদহে মহেশপুর উপজেলাটি ভারত সীমান্তবর্তী এবং এটি দেশের প্রাচীন পৌরসভার (১৮৬৯) একটি। এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি খামার মহেশপুরের দত্তনগরে অবস্থিত। খাদ্যের ভান্ডার নামে পরিচিত মহেশপুর উপজেলা। এ অঞ্চলের মানুষের দাবি ছিল মহেশপুরে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি খামার এখানে অবস্থিত হওয়ায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যে দাবিটি এ অঞ্চলের মানুষের করছে তা পুরোপুরি যৌক্তিক।

২০০৯ সালে বর্তমান সরকার একবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলো কিন্তু এটি আর আলোর মুখ দেখেনি। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হলে এ অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষি খামার ব্যবহার করে গবেষণা কাজ ত্বরান্বিত করতে পারবে। মহেশপুরে কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে মহেশপুরের দত্তনগরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সরকার ইতিমধ্যে যশোর থেকে চৌগাছা, মহেশপুর ও জীবননগর হয়ে দর্শনা পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ফলে বেশ কয়েকটি উপজেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর বর্ডারে (দৌলতগঞ্জ- মাইজদিয়া) একটি স্থল বন্দর তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন। ফলে জীবননগরের রেলপথ ভারতের সাথে আমদানি রপ্তানি কাজে ব্যবহার করা যাবে এবং দ্রুত সময়ে পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো যাবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে রেললাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

ঝিনাইদহ শহরে রেল যোগাযোগ না থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক পথের উপর নির্ভরশীল। সরকার মাগুরা পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই রেল লাইনটি ঝিনাইদহ শহর পর্যন্ত বিস্তৃত করে সরকার ঝিনাইদহ শহরকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে পারে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। এরই আদোলে কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহ হয়ে কালিগঞ্জ পর্যন্ত রেল পথ তৈরি করতে হবে। যার মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সহজেই ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবে এবং কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরের সাথে বিভাগীয় শহর খুলনার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে।

সরকার যশোর-ঝিনাইদহ হাইওয়ে ৬ লেনে উন্নতীকরণ করবে যার মাধ্যমে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে বেনাপোল, ভোমরা ও মংলা বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। এছাড়া পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে রেল পথ নির্মাণ শেষ হলে মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টায় ঢাকা থেকে খুলনা আসা যাবে। এই রেল পথ নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হবে ঝিনাইদহ ও বৃহত্তর কুষ্টিয়াকে, ফলে খুব সহজেই মানুষ রাজধানী থেকে এই জেলা শহরেগুলোতে আসতে পারবে।

খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত ডাবল লাইনের রেল লাইন স্থাপন করতে হবে এবং দর্শনা অথবা চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুর ও মুজিবনগর পর্যন্ত রেল পথ তৈরি করতে হবে। মুজিবনগরে সরকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি উদ্যোগ নিয়েছে, এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার 'মুজিবনগর সরকার' গঠন করা হয়। রেল যোগাযোগ উন্নত হলে দেশ-বিদেশের মানুষ সহজেই মুজিবনগর আসতে পারবে এবং স্বাধীন যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

সরকার দ্বিতীয় পদ্মা সেতু (দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া) তৈরি করলে রাজবাড়ী হয়ে ঝিনাইদহ পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করে পরবর্তীতে অতি সহজেই বৃহত্তর যশোর কুষ্টিয়ার মধ্যে রেলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে পারবে। তাই সরকারকে এখনই নজর দিতে হবে ঝিনাইদহ টু কুষ্টিয়া, মাগুরা টু ঝিনাইদহ এবং দর্শনা/ চুয়াডাঙ্গা টু মেহেরপুর মুজিবনগর পর্যন্ত রেল পথ স্থাপনের। এ অঞ্চলে বিস্তৃত রেল পথ নির্মানের মাধ্যমে কৃষি পণ্য পরিবহন ও যতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করা যাবে, নতুন নতুন শিল্প কারখানা তৈরি হবে, বাড়বে কর্মসংস্থানের পরিমাণ যা দেশের জিডিপি তে অবদান রাখবে।

এছাড়াও বাউল সাধক লালন শাহের নামে সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে সংস্কৃতি ও লালন চর্চার দ্বার উন্মোচিত করতে হবে। ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার মাঝামাঝি কোথাও মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার উন্নতি, যশোরে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে রুপান্তর, ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত দ্রুত গতির ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, খুলনাতে বিমানবন্দর তৈরি ও গ্যাস সরবরাহ করে দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের চেহারা বদলে দেওয়া যেতে পারে।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা